মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের আতিয়ার রহমান। নির্বাচনে দাঁড়ানোই যার নেশা। তবে এখন পর্যন্ত ৪ বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১ বার সদস্য পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এক বারও জয় লাভ করতে পারেনি।
তবে, ৫ পরাজয়ের গ্লানি গায়ে না মেখে আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ধাপ ইউপি নির্বাচনে ৬নং মহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে তিনি। নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল।
শীতকালে খেজুর এবং গ্রীষ্মকালে তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আতিয়ার রহমান। বাড়ির ১০ শতাংশ জমিই তার একমাত্র সম্বল।
আতিয়ার রহমান সংবাদামধ্যমকে জানান, টাকা-পয়সা নেই তাই ঘরে থাকা তিন মণ পাট ও পাটকাঠি বিক্রি করে জোগাড় করেছেন মনোনয়নের সাত হাজার টাকা। এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন স্ত্রীর পোষা একটি ছাগল বিক্রি করে। সেই টাকা দিয়ে ভোটারদের চা-পান খাইয়ে আপ্যায়ন করছেন।
পোস্টার ছাপানো ও মাইকিং করারও টাকা নেই আতিয়ার রহমানের। এক ব্যক্তি কিছু পোস্টার ছাপিয়ে দিয়েছেন তাকে। প্রতিবেশী একজন সদস্য প্রার্থীর মাইক ধার নিয়ে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। মাইক নিয়ে ভ্যানে চড়ে আতিয়ার রহমান নিজেই প্রচার চালাচ্ছেন।
আতিয়ার রহমান আরও জানান, তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও নৌকা প্রতীককে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। দলের সুদিন-দুর্দিনে সব কর্মসূচিতে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করলেও স্বীকৃতি পাননি তিনি।
আতিয়ার রহমানের ইচ্ছে, জীবনে একবার হলেও চেয়ারম্যান হবেন। এবারের নির্বাচনে জয় লাভের বিষয়ে তিনি খুব আশাবাদী। তার বিশ্বাস জনগণ তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।
জানা গেছে, গোপালনগর গ্রামে সরকারের দেওয়া দুই কক্ষের একটি ঘরে স্ত্রী হাজেরা বেগমকে নিয়ে বাস করেন আতিয়ার রহমান। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সফর আলীর আলাদা সংসার করেন। ভূমিহীন বর্গাচাষি আতিয়ার রহমানের নিজের কোনো জমি নেই। খেজুর ও তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস দিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি এবং বর্গা জমি চাষ করে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করে চলে তার সংসার।
স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, “আমার স্বামীর সারা জীবনের স্বপ্ন চেয়ারম্যান হওয়া। নির্বাচনে দাঁড়ানো তার নেশা। কয়েকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও ভোট পাননি। আগে নিষেধ করতাম। এবার আর করিনি। হোক আর না হোক স্বামী যদি একটু শান্তি পায় তাতেই আমি খুশি।”
প্রতিবেশী মতিয়ার রহমান শরীফ বলেন, “আগে নির্বাচন করতে গিয়ে বাড়ির জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন আতিয়ার রহমান। তার সারা জীবনের ইচ্ছা চেয়ারম্যান হওয়া। অধিকাংশ ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।”