পাহাড়ি মুরগীর ভ্যানিটি ঝুড়ি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৪:১৭ পিএম

পাহাড়ি মুরগীর ভ্যানিটি ঝুড়ি

কখনো দেখেছেন ভ্যনিটি ব্যাগে মুরগী রেখে কাঁধে করে ঘুরতে? এই প্রশ্ন হয়ত অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হতে পারে। অথচ বান্দরবান জেলার রুয়াংছড়িতে এই ঝুড়ির দেখা পাওয়া যায় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে। ভ্যানিটি ব্যাগের মত দেখতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি। দেখলেই বোঝা যায় শৈল্পিকতায় হয়নি কোন কার্পণ্য। ঝুড়ির ঠিক মাঝ বরাবর জানলার মতো ফাঁকা হয়। যেন কাঁধে নিয়ে হাঁটার সময় মুরগী চাইলেই তাঁর মাথা বের করে রাখতে পারে। এখানে শুধু মুরগী বহনের ঝুড়ি নয়, আছে মুরগীর ডিম তা দেয়ারও আলাদা ঝুড়ি। 

অথচ মুরগীর পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নিয়ে ঘুরে ঘুরে মুরগী বিক্রি করার দৃশ্য আমাদের শহুরে জীবনে নিতান্তই স্বাভাবিক, যেখানে সেই মুরগীর ব্যথায় আর্তনাতে কোঁকানি বা ছটফটানি কোনটাই শহুরে ক্রেতা বা বিক্রেতার চোখে পরেনা। সেখানে মুরগীর জন্য এমন ভালবাসা অনেককে অবাক করতেই পারে।  

jhuri

জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ১৯২০-এর ৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে, জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ হত্যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এখানে জীবজন্তু বলতে গৃহপালিত বা আটককৃত জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। এই আইনে বলা আছে, “কোনো লোক যদি কোনো জন্তুকে এমনভাবে বাঁধিয়া রাখে, যাহাতে জন্তুটি কষ্ট পায় বা জন্তুটি যন্ত্রণা ভোগ করে। এই অপরাধের জন্য এক শত টাকা জরিমানা কিংবা অনূর্ধ্ব তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হইবে।”

এটা যে শুধু দণ্ডনীয় অপরাধ, তা-ই নয়। শিশুদের পাঠ্যবইয়েও এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক ‘জীবে দয়া’ নামে পাঠ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে “আমরা হাটবাজার থেকে হাঁস-মুরগি কিনে এদের পা ধরে বাড়ি নিয়ে আসি। পা উপরে থাকে। মাথা নিচের দিকে থাকে। ফলে এদের কষ্ট হয়। খুব ব্যথা লাগে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। কাঁদতে থাকে। এটা খুব অন্যায় কাজ।”

jhuri 2

পাহাড়ের এই দুর্গম এলাকায় বসবাসরত আদিবাসীরা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিজেদেরই মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারেন না, অথচ তারা গৃহপালিত প্রাণীর অধিকারগুলো তাদের নিজেদের অধিকারের সমানুপাতে পালন করার চেষ্টা করেন। 

মুরগী থেকে শুরু করে যে কোন গৃহপালিত প্রাণীর অধিকার নিয়ে আমরা কখনোই ভাবি না। প্রাণীর প্রতি ভালবাসার ও মূল্যবোধ তৈরির জন্য প্রয়োজন পরিবার ও পরিবেশের শিক্ষা। এ শিক্ষা নিয়েই চলছে পাহাড়ি এই দুর্গম এলাকার মানুষ, যেখানে এখনও পৌঁছেনি কৃত্তিম বৈদ্যুতিক আলো। তারা মনের আলোর সচ্ছতায়, সরলতায় আর শুদ্ধতায় পরিপূর্ণ।

Link copied!