মাকড়সা? সার্কাসের ক্লাউন? উঁচু ভবন? পড়ে থাকা রক্তাক্ত শরীর? হঠাৎ দেখে চমকে চিৎকার করে উঠতে পারেন ভয়ে । ভয় একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নাকি পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক, তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক । এমনি নানান কিছুর প্রতি ভয় থেকে ফোবিয়া শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই কম-বেশি পরিচিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই নানান রকম ফোবিয়াতে আক্রান্ত।
একটু বইয়ের ভাষায় বলি, “কোনও বিশেষ বস্তু কিংবা কোনও বিশেষ ঘটনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হওয়া, অস্বস্তিবোধ করা বা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া অথবা সেই ব্যপারটাকে অহেতুক এড়িয়ে চলার প্রবণতা।”
ধরুন, আপনি পড়ার টেবিলে কিংবা লাইব্রেরীতে বসে আছেন। আপনার চারপাশে বইয়ের সমারোহ। কিন্তু আপনার কোনো বই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু আপনার বই এর প্রতি এক ধরনের ঘৃণা কিংবা ভয় কাজ কাজ করছে, এটাও কিন্তু এক রকম ফোবিয়া। এি ধরণের ভয়কে বলা হয় বিবিলিওফোবিয়া ।
আসলে এটি একটি যুক্তিহীন ভয়। আপনি যদি বিবিলিওফোবিয়া অনুভব করেন, তাহলে পড়ার সময় আপনার অসুবিধা হতে পারে। লাইব্রেরীতে অসংখ্য বই দেখেও ভয় পেতে পারেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি সাধারণত ছোট বয়সে শুরু হয়। এটি কোনো আঘাতজনিত অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: স্কুলে বাচ্চাদের পড়ার সময় কিছু অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।
ভাবুনতো খুব ছোট বয়সে পড়তে সমস্যা হয় এমন এক শিশু, কিন্তু তাকে জোড় করে কোনো পড়া পড়তে বলা হয়। সবার সামনে শিশুটি পড়া শুরু করে, তবে শিশুটি ঘাবড়ে যায় । আবার সহপাঠীদের হাসিতে তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটি ভুলে যায় না। অনেক বছর পরেও পড়ার সময় তার ঐ অভিজ্ঞতা মনে পড়ে এবং সে প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করে।
এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সে যে কোনও মূল্যে চেষ্টা করে বইকে এড়িয়ে চলতে। বিভিন্ন কারণ খুজে বের করে যেনো পড়তে না হয় । পড়লেও, পড়া শেষ করে তার হাত কাঁপতে শুরু করে, তার কণ্ঠ শুকিয়ে আসে, ঘামতে থাকেন । এমনকি উচ্চ রক্তচাপ পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
বিবলিওফোবিয়া থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব । তবে আলাদা করে ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা হয় না এর । ভয় কাটাতে তাকে একটি বই নিয়ে পড়তে বলা হয়। মানুষিক ভাবে তিনি জানেন তিনি চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে শুরু করে যা কিনা অবিচ্ছিন্ন ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। একটি নিয়ম হিসাবে, চিকিত্সার কোর্স করার পর, একজন ব্যক্তি বাইবেলিওফোবিয়া থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।