৮৭ বছরের সংসার করা দম্পতির রসায়নে কী এমন রহস্য আছে?

মো: আবু সাঈদ

অক্টোবর ৪, ২০২৩, ০২:০১ এএম

সংগৃহীত ছবি

ভেবে দেখুন, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী একসাথে ১৯৩০ সালের মহামন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নাগরিক অধিকার আন্দোলন দেখা এবং শেষে প্রথম কোনো আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে বারাক ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে দেখা। 

বলছিলাম, হাবার্ট ফিশার-জেলমায়রা দম্পতির কথা। 

১৯২৪ সালের ১৩ মে বিয়ের পর ২০০৮ সালে এসে তাদের ৮৪ বছরের দাম্পত্য জীবন ভেঙে দেয় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের রেকর্ড। এই ঘটনা গিনেজ বিশ্ব রেকর্ডে নাম লেখায়। ২০১০ সালে বারাক ওবামা এই দম্পতিকে প্রশংসাসূচক একটি পত্র পাঠান।

আমরা যে সমাজে বসবাস করি অনেকেই হয়তো ভাববেন, একসাথে ৮৪ বছরের সংসার প্রায় অসম্ভব। গবেষকরা বলছেন, প্রথম বিবাহের ৪১ শতাংশই বিচ্ছেদের মাধ্যমে শেষ হয় । দ্বিতীয় বিবাহের ৬০ শতাংশ বিচ্ছেদের মাধ্যমে শেষ হয় এবং তৃতীয় বিবাহের ৭৩ শতাংশের বিচ্ছেদ হয়।

কিন্তু কীভাবে এ দম্পতি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার মত এতটা সময় একসাথে ছিলেন । কী এমন আছে হাবার্ট ফিশার-জেলমায়রা দম্পতির রসায়নে। চলুন জেনে আসি।

তাদের যখন জিজ্ঞাসা করা হল তাদের বৈবাহিক জীবনের কঠিন সময় কিভাবে পার করেছে । খুব সহজ একটা বাক্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। তা হল, “মৃত্যুই আমাদেরকে আলাদা করতে পারে।”

তারা মনে করেন পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, কথা বলা দাম্পত্য জীবনে খুবই জরুরি। সৎ থাকা, বিশ্বস্ত হওয়া, সত্যবাদী হওয়া এবং যা আছে তা দিয়েই ভালোবাসা-ই তাদের সম্পর্ক এত দূর পর্যন্ত এসেছে।

একজন ভালো দাম্পত্য সঙ্গীর কী কী গুণ থাকা উচিত প্রশ্ন প্রসঙ্গে হার্বাট বলেন, জেলমায়রা কঠোর পরিশ্রম করত এবং পরিবারের যত্ন নিত। আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতাম।

যখন জিজ্ঞাসা করা হল দূরে থাকার সময়টা আপনারা কিভাবে কাটান। হার্বাট বলেন, আমরা ২ মাস আলাদা ছিলাম যখন জেলমায়রা আমাদের ৪র্থ সন্তানের সাথে হাসপাতালে ছিল। সেই সময়টা আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন ছিল।

হার্বাট মনে করে, সম্পর্ক কোন খেলা নয়। দাম্পত্য সঙ্গী কোন প্রতিপক্ষ নয় যে তার বিরুদ্ধে স্কোর করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা দুজনকে একই দলে পাঠিয়েছেন যেন দুইজনেই এক সাথে জয়ী হতে পারে। সম্পর্ক ভাঙা না শিখে, গড়া শিখতে হবে।

কোন জিনিসগুলো তাদের দুজনের মাঝেই আছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিবাহ হল সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিশ্রুতি। প্রতিদিন আমরা একে অপরের জন্য প্রার্থনা করি।

এটা স্পষ্ট যে হার্বাট ও জেলমায়রা সুন্দর একটা বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করেছেন। বিবাহের ৮৭ বছর পরেও তারা একে অপরকে এমনই ভালোবাসেন যেমনটি ভালোবেসেছিলেন বিয়ের প্রথম দিন।

১০৫ বছর বয়সে হার্বাট ২০১১ সালে মারা যান। ২ বছর পর ২০১৩ সালে জেলমায়রাও ১০৫ বছর বয়সে মারা যান। হার্বাট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ দম্পতি ৮৭ বছর সংসার করেন।

Link copied!