বৌয়েরা চায় স্বামীরা তাদের পেটাক!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৮, ২০২১, ০৫:২৫ পিএম

বৌয়েরা চায় স্বামীরা তাদের পেটাক!

স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। আর এই ধারা প্রাচীণ কাল থেকেই চলে আসছে। তবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীরা দিন দিন সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আবার বিপরীত প্রতিচ্ছবিও আমরা দেখতে পাই। সেখানে দেখা যায়, স্বামীদের হাতে বৌ পেটানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেক নারী।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় ভারতের তেলাঙ্গানা রাজ্যসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের নারীরা স্বামীদের হাতে বৌ পেটানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।  

১৮টি প্রদেশে চালানো হয় সমীক্ষা

বৌ পেটানো কি ঠিক? স্বামী যদি স্ত্রীকে আঘাত করেন বা মারধর করেন, আপনার মতে কি তা যুক্তিসঙ্গত? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ২০১৯-২১ সালে নারী ও পুরুষের মধ্যে সরকারি এই সমীক্ষাটি চালানো হয় ভারতের ১৮ টি প্রদেশে।

সমীক্ষা চালানো প্রদেশগুলো হলো-পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, গোয়া, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা এবং কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর।

সমীক্ষার ফলাফল

সমীক্ষায় দেখা গেছে, তেলাঙ্গানা প্রদেশের ৮৩ দশমিক ৮ ভাগ নারী বলেছেন, স্বামীর হাতে মারধর ঠিক ও যুক্তিসঙ্গত। এই প্রদেশের নারীরা যেমন ঠিক বলেছেন, তেমনি দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ৮১ দশমিক ৯ ভাগ পুরুষও মনে করেন, স্বামী যদি স্ত্রীকে মারেন, তাতে দোষের কিছু নেই।

পশ্চিমবঙ্গসহ ১৩টি রাজ্যে এই সমীক্ষার আওতায় আসা নারীরাই মনে করছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করাটাই স্বামীর হাতে স্ত্রীর নিগ্রহের প্রধান কারণ।

নারীদের সমর্থন উদ্বেগজনক

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির জাতীয় পরিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিক প্রকাশিত ফলাফলের কিছু ইতিবাচক দিক নিয়ে চর্চা হচ্ছে ইদানীং। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে- শহরাঞ্চলের ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। ভারতে নারীপ্রতি শিশুর জন্মহার নেমে এসেছে দুইয়ে। জন্মহারে এগিয়ে শিশুকন্যারা। তা সত্ত্বেও স্বামীর হাতে স্ত্রীর শারীরিক নিগ্রহকে যেভাবে সমর্থন করেছেন নারীদেরই একাংশ, তা উদ্বেগজনক।

সেই প্রশ্নেরই উত্তর বাছাই করে দেখা যায়, ‘হ্যাঁ’-এর শতকরা হিসাবে পুরুষদের মধ্যে কর্ণাটক এবং নারীদের মধ্যে তেলাঙ্গানা শীর্ষে। দুই তালিকায়ই সবার শেষে হিমাচলপ্রদেশ। সে রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ নারী মনে করেন, কাজটা ঠিক।

নারীদের ‘হ্যাঁ’-এর তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ), কর্ণাটক (৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ), মণিপুর (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং কেরালা (৫২.৪ শতাংশ)।

পুরুষদের মধ্যে সমীক্ষায় এ ক্ষেত্রে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা (২১ দশমিক ৩ শতাংশ)।

কেন বলছেন বৌ পেটানো ঠিক?

সমীক্ষায় যারা বলছেন বৌ পেটানো ঠিক, কোন কোন কারণে তা মনে করছেন? এ ক্ষেত্রে সমীক্ষকরা সম্ভাব্য সাতটি কারণের কথা জানতে পেরেছেন।

১. স্বামীকে না বলে বাইরে যাওয়া। ২. সংসার বা সন্তানদের অবহেলা করা। ৩.স্বামীর সঙ্গে তর্ক করা। ৪.স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাওয়া। ৫.ভালো রান্না না করা। ৬.স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে বলে স্বামীর সন্দেহ করা এবং ৭. শ্বশুরবাড়ির লোকদের ‘অশ্রদ্ধা’ করা।

পশ্চিমবঙ্গের নারীরা কি ভাবছেন?

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গসহ ১৩টি রাজ্যের নারীদের অভিমত, স্ত্রীর তরফে শ্বশুরবাড়ির লোকদের অশ্রদ্ধাই পারিবারিক দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সংসার ও সন্তানদের অবহেলা করা। এই সম্ভাব্য কারণের তালিকায় সবার নিচে রয়েছে পরকীয়ার সন্দেহ। কিন্তু মিজোরামের নারীদের মতে আবার সেটাই প্রধান কারণ।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার আগের রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, সারা ভারতের ৫২ শতাংশ নারী এবং ৪২ শতাংশ পুরুষ পারিবারিক হিংসাকে যুক্তিযুক্ত বলে মেনে নিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ওই শতকরা হার আশির ঘরে পৌঁছানো নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে। নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান সারদা এ এল বলছেন, এ হলো এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, যা নারীদের একাংশের মনের মধ্যে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা মনে করছেন, পরিবার ও স্বামীর সেবা করে যাওয়াটাই তাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

Link copied!