শুক্রবারের পরিস্থিতি দেখে কারফিউ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৪, ০৫:০০ এএম

শুক্রবারের পরিস্থিতি দেখে কারফিউ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত হওয়া সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল শুক্রবারের পর দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে কারফিউ প্রত্যাহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শুক্রবারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কারফিউ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এদিন বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গতকাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বৈঠকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের তৈরি করা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।

গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে ভয়াবহ সংঘর্ষের কারণে ঢাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোটা আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০১ জনে উপনীত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, আগামীকাল শুক্রবার সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে ও এ বিষয়ে দলটির নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, এদিন বিকেল তিনটায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি, নারায়ণগঞ্জ সিটি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা ছাড়া সব জেলায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা অভিমত দিয়েছেন। সূত্র আরও জানায়, অন্যান্য জেলায় আগামীকাল শুক্রবারের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর প্রাথমিক স্কুলগুলো আবারও পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে।

ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৬ জুলাই থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। শিক্ষাবোর্ডগুলো ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে। গতকাল বুধবার বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “এই পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালুর জন্য অনুকূল নয়। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ করাই এখন অগ্রাধিকার পাবে।”

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকালীন ১৬ জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের বিষয়ে কথা বলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন প্রতিবেদন দাখিলের পর ব্যবস্থা নেবে সরকার।

আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: শুধু ৬ জনের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনবে, তারা যেই হোক না কেন।”

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সম্মত হন যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ছাড়া বাকি জেলাগুলো থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা উচিত। এই ৪ জেলায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ থাকতে পারে।

এমনকি দিনে কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও রাজধানীর শনির আখড়া, ডেমরা, রায়েরবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০, সাভার ও উত্তরায় কঠোর নজরদারি থাকবে। কেননা এসব এলাকাতেই গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

Link copied!