জুলাই ২৪, ২০২৩, ০১:০০ পিএম
বলা হয়ে থাকে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জাত অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক। যার নামের পাশে ‘মহানায়ক’ বিশেষণটি জুড়ে না দিলে অসম্পূর্ন মনে হয়। তিনি উত্তম কুমার-বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা।
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম নেওয়া উত্তম কুমারের আসল নাম অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রে প্রবেশের আগেই ২৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন বান্থবী গৌরি দেবিকে। বিয়ের পরই চলচ্চিত্রে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি ছবিতে অরুন কুমার ও অরূপ কুমার নামে অভিনয় করেছেনঅ তবে সবগুলোই ফ্লপ করে।
১৯৫৩ সালের ঘটনা। ওই বছর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করা উত্তম কুমারের এই ছেবিটি ব্লকবাস্টার ব্যবসা করে। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়।
আড়াইশো-র বেশি সিনেমায় অভিনয় করা উত্তম নায়ক হিসাবেই থেকে গিয়েছেন। বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত, অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম অন্যতম। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন বাংলা সিনেমার এই মহানায়ক।
উত্তমকুমারের প্রসঙ্গ আসলে অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন ও সুপ্রীয়া দেবির প্রসঙ্গ অবলীলায় এসে যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসায়িকভাবে সফল এবং একই সাথে প্রশংসিত চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় একসাথে অভিনয় করেছিলেন উত্তম-সুচিত্রা জুটি। এগুলির মধ্যে প্রধান হল - হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা।
সুচিত্রা সেন ছাড়াও উত্তম কুমারের সাথে যে নায়িকার জুটি প্রায় সমানে সমানে আলোচিত তিনি হলেন সুপ্রীয়া দেবী। তাদের জুটির জয়যাত্রা শুরু ‘সোনার হরিণ’ দিয়ে। এরপর তারা একে একে উত্তরায়ণ, কাল তুমি আলেয়া, সন্যাসী রাজা, বন পলাশীর পদাবলী, বাঘ বন্দীর খেলা ইত্যাদি জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।
সিনেমার জগত ছাড়াও বাস্তবেও সুপ্রিয়া দেবীর সাথে উত্তম কুমারের এক গভীর সম্পর্ক ছিল। উত্তমের ডাগর ডাগর চোখের নিষ্পাপ চাহনি- প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েন সুপ্রীয়া। তাইতো নিজের স্বামীকে পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে উত্তম কুমারের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। উত্তমও নিজের স্ত্রী গৌরি দেবি ও বাড়ি ছেড়ে জীবনের শেষ সতের বছর তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সাথেই কাটিয়েছেন।
উত্তম কুমার ছিলেন ভার্সেটাইল অভিনেতা। হার্ট অ্যাটাক হলে কেউ ঝিমিয়ে পড়েন, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। কিন্তু উত্তম কুমার ক্যামেরার সামনে তখন জীবনের শেষ শট দিয়েছেন। ২৩ জুলাই ১৯৮০ সালের ঘটনা। সলিল দত্ত পরিচালিত ওগো বধূ সুন্দরী ছবির শ্যটিং চলছিল। জীবনের শেষ সংলাপ বলার সময়ই বুকের মাঝে হাত চলে যায় উত্তমের। কিন্তু তাঁর সংলাপ বলার ভঙ্গি, অভিনয়, স্বরক্ষেপণ শুনে কারও বোঝার সাধ্য ছিল না। মাত্র এক দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।
মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যান আকাশের ঠিকানায়। তবে ৪২ বছর পরেও উত্তম-ক্যারিশমা সমান ভাবে বাঙালির মননে গেঁথে রয়েছে। তাঁর উপস্থিতি, তাঁর অভিনয়, তাঁর আকর্ষণ সব কিছু যেন আজও বাঙালির কাছে অমলিন।