'ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১১, ২০২১, ০১:০৭ পিএম

'ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?’

ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতাকারী ভারতীয় বাঙালি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। আজ ১১ আগস্ট, মহান এই বিপ্লবীর ১১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী।  ১৯০৮ সালের এই  দিনে ফাঁসি হয়েছিল ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন বয়সী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর।

ভারতের কনিষ্ঠতম এই  বিপ্লবী মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার মৌবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপ্রিয় দেবীর তিন কন্যার পর চতুর্থ সন্তান ক্ষুদিরাম। দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করায় তৃতীয় পুত্রও জন্মের পর মারা যাবে-এই অন্ধবিশ্বাস ছিল লক্ষ্মীপ্রিয় দেবীর। তাই বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো চালের খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এভাবেই শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়।

পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মাসির বাড়িতে বড় হতে থাকেন ক্ষুদিরাম। তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। এই মেদিনিপুরে বিপ্লবী জীবনের অভিষেক ঘটে তার। যোগ দেন বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায়।ক্ষুদিরাম বসু তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। 

১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল। বিহারের মুজফ্ফরপুরে ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে বোমা ছুড়ে হত্যা করতে গিয়েছিলেন অত্যাচারী ব্রিটিশ বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সাহেবকে। দুর্ভাগ্যবশত যে গাড়িটিতে তাঁরা বোমা ছুড়েছিলেন তাতে ছিলেন না কিংসফোর্ড। ফলে কিংসফোর্ডের বদলে দুই ইংরেজ মহিলার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রফুল্ল চাকী সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারলেও ক্ষুদরাম বসু পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

১৯০৮ সালের ২২ মে। তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয়। বিচারক ছিলেন ব্রিটিশ মি. কর্নডফ এবং দুজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তার বয়স খুব কম ছিল। বিচারক কর্নডফ তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে যে ফাঁসিতে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে কিনা? ক্ষুদিরাম এর জবাবে মুচকে হেসে বলেন ‘বন্দে মাতরম’।

১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট। জেলের ভিতরে গড়া হয়েছিল ১৫ ফুট উঁচু এক ফাঁসির মঞ্চ। দুই দিকে ছিল দুটি খুঁটি। তার উপর একটি মোটা লোহার রড ছিল আড়াআড়িভাবে লাগানো। সেই রডের মাঝখানে মোটা একগাছি দড়ি বাঁধা ছিল। তার শেষ প্রান্তে ছিল মরণ-ফাঁস।

ফাঁসির আগে উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলেছিলেন তিনি। তারপর বাঁধা হয় দুইহাত। গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো মাত্র জল্লাদকে শহীদ শুদিরাম প্রশ্ন করেছিলেন 'ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?' এটাই ছিল বীর শহিদের জীবনের শেষ কথা।

১৮ বছরের এক যুবকের সাহসী এই আত্মদান জাগিয়ে তুলেছিল ভারতবাসীকে, শক্তিশালী করেছিল স্বাধীনতা আন্দোলন। এভাবে তার দেখানো বিপ্লবী পথে এক সময় গড়ে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন।

 

Link copied!