বিশ্ব জুড়ে এখনও সমান জনপ্রিয় ও আলোচিত প্রিন্সেস ডায়ানা। যাকে তাবৎ দুনিয়ার লাখো কোটি মানুষ ডাকতো হৃদয়ের রানী বলে। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এবং তাদের কাছাকাছি গিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া একমাত্র প্রিন্সেস ছিলেন তিনি। বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই সদস্যের জন্মদিন আজ (১ জুলাই)। তিনি বলতেন এবং বিশ্বাস করতেন, 'তুমি সেটাই করো যা তোমার হৃদয় চায়।' আর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজের হৃদয়ের কথাই শুনে গেছেন তিনি। বিশ্বের বুকে রাজপরিবারকে জনগণের পাশে দাঁড় করানোরর এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
প্রিন্সেস ডায়ানার পরিবার থেকে দেওয়া নাম ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেন্সার যা বিয়ের পর হয় ডায়ানা ফ্রান্সিস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর। যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী এবং ওয়েলস এর রাজকুমারী ডায়ানা। সমাজসেবামূলক কাজে অসামান্য অবদানের জন্যও তিনি খুব প্রশংসিত হন বিশ্ব জুড়ে। বিশেষত এইডস রোগীদের সাহায্যে ও স্থলমাইন নিষিদ্ধের পক্ষে প্রচারণায় তার অবদান তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। একজন বিখ্যাত সেলিব্রেটি হয়েও এইডস রোগীদের সঙ্গে তার সর্বাধিক ফটোগ্রাফের রেকর্ড বেশ প্রশংসনীয় ছিল। কারণ ওই সময় একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে কেবল সংস্পর্শের মাধ্যমেই এইডস ছড়ায়। ডায়ানা মানুষের এই ধারণাকে বদলে দিয়েছিলেন।
মানবকল্যাণে ডায়ানার আরেকটি অসামান্য অবদান হল- বিশ্বব্যাপী স্থলমাইন নিষিদ্ধ করণে তার ব্যাপক প্রচারণা। ১৯৯৭ সালে অ্যাঙ্গোলায় স্থলমাইন অপসারণ তদন্ত করতে ডায়ানা নিজেই মাইন ক্ষেত্র পরিদর্শন করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর স্থলমাইন নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক বিখ্যাত অটোয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি সম্পাদনে ডায়ানার প্রচারণা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ডায়ানা ১৯৮১ সালে রাজপুত্র চার্লসকে বিয়ে করে “প্রিন্সেস ডায়ানা অফ ওয়েলস” উপাধি গ্রহণ করেন। তার গর্ভেই এসেছেন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। ওই সময় তাকে বিশ্বের শীর্ষ ফটোগ্রাফড ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হতো। যার ছবি সর্বাধিকবার “পিপল” ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিল।
১৯৬১ সালে রাজ পরিবারের সাথে সম্পর্কিত এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডায়ানা। তার বাবা অ্যাডওয়ার্ড স্পেন্সার ছিলেন রাজা চার্লস দ্বিতীয় এর বংশধর। মাফ্রান্সিস ভিসকাউটেস অ্যালথর্প একজন মার্কিন বংশোদ্ভূত রাজ পরিবারের সদস্য।
ডায়ানা যখন খুব ছোট তখন তার বাবা-মার সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে আদালতে এক তিক্ত বিতর্কের পর তিনি তার বাবার হেফাজতে চলে যান। ছাত্র হিসাবে তিনি তেমন উজ্জ্বল ছিলেন না, কিন্তু গান ও সঙ্গীতে তার ভালো দখল ছিল।
যখন হবু স্বামী রাজপুত্র চার্লসের সাথে তার পরিচয় হয়, তখন তিনি লন্ডনে একটি নার্সারি স্কুলের খণ্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৮১ সালে ডায়ানা প্রিন্স চার্লসকে বিয়ে করেন। তখন চার্লস তার থেকে ১৩ বছরের বড়। প্রায় এক বিলিয়ন লোক তাদের রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিল।
কিন্তু তাদের সংসার বেশি দূর গড়ায়নি। ১৯৯২ সালেই প্রিন্স চার্লসের সাথে তার সম্পর্কের ইতি ঘটে। এ ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন। ফলে তার মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
ওয়েলসের রাজকুমারী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডায়ানা উপস্থিত থাকতেন তিনি। এর সুবাদে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে বিবিসিকে দেওয়া প্রিন্সেস ডায়ানার একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে বিগত বছর ধরে চলছে আলোচনা। ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেন্সার অভিযোগ তোলেন, প্রিন্সেস ডায়নার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অসৎ উপায় ব্যবহার করেছিলেন বিবিসি'র সাংবাদিক মার্টিন।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিন্সেস ডায়ানা। ধারণা করা হয়, তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা ছিল না। কারণ যে গাড়ির সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছিল তার চালক দোদি আল-ফায়েদ ওই সময় নেশাগ্রস্ত ছিলেন। যদিও সে তথ্যের সত্যতা মেলেনি। প্রসঙ্গত, দোদি ছিলেন ডায়ানার প্রেমিক।
অনেকে ধারণা করেন রাজপরিবারের দ্বন্দ্বের কারণে তার মৃত্যু। অবশ্য এগুলো সবই ধারণা প্রসূত। এমন তথ্যের কোন ভিত্তি আজও পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যু আজও রহস্য।