এক চার্জে ব্যাটারি চলবে ৫০ বছর!

শামস তারেক আজিজ

জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৬:৫২ এএম

এক চার্জে ব্যাটারি চলবে ৫০ বছর!

সংগৃহীত ছবি

৯০ দশকের শিশুদের মাঝে আমরা প্রায় সকলেই আমাদের শৈশবকালে বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিয়ে খেলা করেছি। এসব খেলনার অনেকগুলোই আবার ছিল ব্যাটারিচালিত। সে সময় সবচেয়ে বড় ভয় ছিল হঠাৎ ব্যাটারির শক্তি শেষ হয়ে যাওয়া।

সাম্প্রতিককালে পারমাণবিক শক্তির ব্যাটারি বানিয়ে রীতিমতো পুরো বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছে বেইজিংভিত্তিক চীনা প্রতিষ্ঠান, বেটাভোল্ট। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে এই ব্যাটারি এক টানা ৫০ বছর কোনো চার্জ ছাড়াই চলতে পারবে।

‘বেটাভোল্টের বিভি ১০০’ নামক এই পারমাণবিক ব্যাটারি শীঘ্রই বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

‘বেটাভোল্ট বিভি ১০০’ ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে, ‘নিকেল–৬৩ আইসোটোপ’ এবং হীরার অর্ধপরিবাহী উপাদান।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, “এ ধরনের পারমাণবিক ব্যাটারি মহাকাশ, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ডিভাইস, চিকিৎসা, এমইএমএস সিস্টেম, এআই সেন্সর, ছোট ড্রোন এবং রোবটে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে।”

তারা এটি তৈরি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এ ধরনের ব্যাটারিচালিত স্মার্টফোন তৈরি। যে স্মার্টফোনে কখনো চার্জ দিতে হবে না।

একটি ইলেকট্রনিকস পণ্য কেনার পর ৫০ বছরের জন্য চার্জ নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে সেটিই অভাবনীয় বিষয়। অবশ্য বিভি ১০০ উৎপাদন এখন পাইলট পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে এ ব্যাটারি খুব বেশি শক্তি সরবরাহ করতে পারছে না। যদিও প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে একাধিক বিভি ১০০ ব্যাটারি একত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা ১ ওয়াট সংস্করণের পারমাণবিক ব্যাটারি বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে।

এই ধরনের ব্যাটারির বিশেষত্ব কী?

প্রথমত, ৫০ বছর পর্যন্ত কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই নিরাপদে ব্যবহার করা যাবে ক্ষুদ্রাকৃতির এই পারমাণবিক ব্যাটারি।

দ্বিতীয়ত, বিশ্বে এটিই প্রথম বড় আকারের হীরার সেমিকন্ডাক্টর উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাদের চতুর্থ প্রজন্মের হীরার সেমিকন্ডাক্টর উপাদান ব্যবহার করছে।

পারমাণবিক ব্যাটারি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিভি ১০০ ব্যাটারির উন্নয়ন এবং উৎপাদন পরিকল্পনা সম্পর্কে বেটাভোল্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৯৬০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) যে পারমাণবিক ব্যাটারি বানিয়েছিল বিভি ১০০–এর সেলগুলো তা থেকে বেশ আলাদা। আগের পারমাণবিক ব্যাটারিগুলো আকারে বড়, বিপজ্জনক, গরম হয়ে ওঠে এবং ব্যয়বহুল। 

 

বেটাভোল্টের ব্যাটারিতে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নিকেল–৬৩ আইসোটোপ। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এটি তামায় রূপান্তরিত হয়ে স্থিতিশীল হয়। হীরার সেমিকন্ডাক্টর উপাদান ব্যবহার করায় এই ব্যাটারি মাইনাস ৬০ থেকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পরিবেশে সচল থাকে। ইউরোপ–আমেরিকার প্রযুক্তির চেয়েও এই প্রযুক্তি অগ্রগামী বলে দাবি করেছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি।

তবে ২০২৫ সাল নাগাদ আসতে যওয়া বিভি-১০০ ব্যাটারির সরবরাহ ক্ষমতা মাত্র ১ ভোল্ট। কিন্তু বর্তমানের অনেক প্রযুক্তিতে এর থেকে বেশি শক্তির প্রয়োজন হতে পারে। তাই আগামীতে আরও বেশি শক্তিসম্পন্ন ব্যাটারি বানাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। সেজন্য ব্যবহার করা হতে পারে স্ট্রন্টিয়াম–৯০, প্রমিথিয়াম–১৪৭ এবং ডিউটেরিয়ামের মতো আইসোটোপ। যার আয়ুস্কাল ২৩০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

Link copied!