গত বুধবার (১৬ই আগস্ট) উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন। রাজধানীর তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকায় ‘অডি বাংলাদেশের’ কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহায়তায় স্টেশনটি স্থাপন করেছে ‘প্রোগ্রেস মটরস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। স্টেশনটিতে ‘এখন চার্জ’ নামক অ্যাপের মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়া যাবে নির্দিষ্ট সময়, পরিশোধ করা যাবে টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের মধ্যে সারাদেশে ১১টি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কথা ভাবছে। সারাদেশে পর্যন্ত মোট ৩৪টি বৈদ্যুতিক গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে।
ইলেকট্রিক গাড়ি
ইলেকট্রিক ভিহিক্যাল বা ইভি এখন বিশ্বের প্রায় সকল দেশের অটোমোবাইল সেক্টরের আলোচনার প্রধান বিষয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এ যুগে, জ্বালানি তেল চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে ক্রমেই বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ধরনের গাড়ি। সাম্প্রতিককালে ব্যাপক আলোচনায় আসলেও এ ধরনের গাড়ির প্রচলন কিন্তু নতুন নয়, নানা বিবর্তনের মাঝে বর্তমানে ভোক্তাদের চাহিদার শীর্ষে উঠে আসছে এ ধরনের গাড়ি।
ইভির বিক্রি কেমন?
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) এর মতে, সমগ্র বিশ্বে শুধু ২০২২ সালেই, ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটির বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। যা সে বছরের, মোট বিক্রিত গাড়ির প্রায় ১৪ শতাংশ এবং ২০২১ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশী। ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ২.৬ কোটির বেশি এধরনের গাড়ি চলাচল করছে। আইইএ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির হিসাবে প্লাগ-ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যান (পিএইচইভি) ও ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক যান উভয়কেই বিবেচনা করে করেছে।
ইভি বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, গাড়ির করের ওপর প্রণোদনা প্রদান, বেশি-বেশি চার্জিং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং বাধ্যতামূলক বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে বিক্রি হওয়া সমস্ত গাড়ির, ১৫ শতাংশ ইভি বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বিক্রি হওয়া নতুন, সব যাত্রীবাহী যানবাহনের কার্বন নির্গমনের হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যুক্তরাজ্যের সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন পেট্রোল ও ডিজেল গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিভিন্ন দেশের এসব নীতিমালা প্রণয়নের কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীন আধিপত্য বিস্তার করছে। মোট বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রায় অর্ধেকেই তাদের তৈরি। দ্বিতীয়তে আছে ইউরোপ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
গত কয়েক বছরে, বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানি শুরু হলেও চার্জিং স্টেশনের অভাব, নিবন্ধন ও কর হার নিয়ে জটিলতায় কিছুটা ভোগান্তিতে ছিল। এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ প্রণয়ন এবং কর হার নির্ধারন করে। এ সকল কারণে এ ধরণের গাড়ির নিবন্ধন সহজ হয়েছে, পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হলে সামনের দিনগুলোতে এর চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘অডি’ একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি এদেশের বাজারে আমদানি করেছে। দেশীয় প্রস্তুতকারীদের মাঝে ‘পালকী মোটরস’ ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরি করছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা সম্প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ হলে এ ধরণের গাড়ির চাহিদায় পরিবর্তন হতে পারে। পাশাপাশি কমতে পারে পরিবেশ দূষণও।