ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো সামগ্রিক আইন প্রণয়নের পথে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর আওতায় বায়োমেট্রিক সার্ভেইল্যান্সে এআই ব্যবহার ও চ্যাটজিপিটির মতো এআই বটের ব্যবহারে কড়াকড়ি হবে।
শুক্রবার ( ৮ ডিসেম্বর ) ইইউ নীতিনির্ধারকেরা এবিষয়ে সাময়িক চুক্তিতে পৌঁছে, যাকে ‘যুগান্তকারী’হিসেবে আখ্যা দিয়েছে রয়টার্স।
ইইউ আইনটি অন্যান্য সরকারের জন্য একটি নীলনকশা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইট-টাচ পদ্ধতি ও চীনের অন্তর্বর্তী নিয়মের বিকল্প হতে পারে এই আইন।
চুক্তিটি স্বাক্ষরের আগের দিন চুক্তিটি নিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা বিতর্ক হয়। দুপক্ষই কয়েক দিনের মধ্যে এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করবে, যা পরে আইনে রূপান্তরিত হতে পারে।
চুক্তিটি অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটি এবং জেরনারেল পারপোজ এআই সিস্টেম (জিপিএআই) এর মতো ফাউন্ডেশন মডেলগুলোকে বাজারে আনার আগে স্বচ্ছতার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত ডকুমেন্ট তৈরি করা, ইইউ কপিরাইট আইন মেনে চলা এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কনটেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা।
এছাড়া এই আইনের আওতায় উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন ফাউন্ডেশন মডেলের সিস্টেমিক বা পদ্ধতিগত ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রশমিত করতে হবে, গুরুতর ঘটনাগুলোর বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনে রিপোর্ট করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর দক্ষতা সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে হবে।
শুধুমাত্র বর্তমান বা সম্ভাব্য হুমকির (যেমন সন্ত্রাসী হামলা) তথ্য পেতে, অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এবং সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের জন্য সরকার রিয়েল-টাইম বায়োমেট্রিক নজরদারি ব্যবহার করতে পারে।
চুক্তিটি রাজনৈতিক, ধর্মীয়, দার্শনিক বিশ্বাস, যৌন পরিচয় এবং জাতি অনুমান করার জন্য সামাজিক স্কোরিং এবং বায়োমেট্রিক শ্রেণিকরণ ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করে। সেই সাথে ইন্টারনেট বা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে মুখের ছবিগুলোর কাটছাঁট করাও এই চুক্তির মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই বিধির আওতায় ভোক্তাদের অভিযোগ করার ও অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকার থাকবে। আর বিধিলঙ্ঘনের জন্য ৭৫ লাখ ইউরো (৮১ লাখ ডলার) অথবা মোট রাজস্ব আয়ের ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো বা বৈশ্বিক রাজস্ব আয়ের ৭ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।
ব্যবসায়িক গ্রুপ ডিজিটালইউরোপ বলেছে, প্রস্তাবিত বিধি সম্প্রতি পাশ হওয়া অন্যান্য বিধির সাথে মিলে কোম্পানিগুলোর জন্য বোঝা। এআই নিয়ে ঝুঁকিভিত্তিক আইন আইনের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু, আইনে পুরো প্রযুক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার ব্যাপার হয়েছে।
এই চুক্তির সমালোচনা করে ইউরোপিয়ান ডিজিটাল রাইটসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার এলা জাকুবোস্কা বলেছেন, এই আইন নিয়ে উৎসাহিত হওয়া কঠিন।
আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করলে আইনটি পরের বছরের শুরুর দিকে পার্লামেন্টে পাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ২০২৫ সালের আগে এটি কার্যকর হবে না।
মানুষের মতো কথোপকথনে নিযুক্ত হতে পারে, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং কম্পিউটার কোড লিখতে পারে এমন প্রযুক্তির সুবিধার সাথে ভারসাম্য আনতে চাইছে বিশ্বের বিভিন্ন সরকার।
ইইউভুক্ত দেশ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে শুক্রবার ( ৮ ডিসেম্বর ) প্রায় ১৫ ঘণ্টা আলোচনার পর চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়।
গুগলের প্রধান কোম্পানি আলফাবেট গত বৃহস্পতিবার ওপেনআইয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করতে নতুন এআই মডেল ‘জিমিনি’ উন্মোচন করেছে।