চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল: ভারতীয় দাপট নাকি কিউই রোমাঞ্চ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৯, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল: ভারতীয় দাপট নাকি কিউই রোমাঞ্চ

ছবি: সংগৃহীত

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার মাঠে নামছে ভারত ও নিউ জিল্যান্ড। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায়।

ফাইনালের আগের দিন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের সংবাদ সম্মেলনে বেশির ভাগ প্রশ্নই হলো স্পিন নিয়ে। ভারতের সহ-অধিনায়ক শুবমান গিলের সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য অত বেশি ছিল না এই প্রসঙ্গ। তবে সেখানেও নানা কথায় উঠে এলো, স্পিনই গড়ে দেবে ম্যাচের ভাগ্য।

দুই দল যখন মুখোমুখি হচ্ছে, ফিরে আসছে ২৫ বছর আগের স্মৃতিই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নাম যখন ছিল আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপ, ২০০০ সালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে নাইরোবিতে ফাইনালে খেলেছিল এই দুই দল। সেবার ভারতকে চার উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড। ভারত সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছিল পরের আসরেই শিরোপা জিতে। পরে ২০১৩ সালেও ট্রফি জয় করে তারা।

এবার জিততে পারলে প্রথম দল হিসেবে তিনবার শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়বে ভারত। সেই সম্ভাবনাও প্রবল। পরিষ্কার ফেভারিট হয়েই ফাইনালে নামছে রোহিত শার্মার দল। টুর্নামেন্টের একমাত্র দল হিসেবে একই শহরে থেকে একই মাঠে অনুশীলনের সুবিধা তারা পেয়েছে। এই নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে চর্চা, আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে তুমুল। কিছু সুবিধা যেমন নিশ্চিতভাবেই পেয়েছে ভারত, তেমনি কন্ডিশন ও উইকেটকে দারুণভাবে কাজে লাগানোর কৃতিত্বও তাদের প্রাপ্য। দুটির সংযোগে তারা হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। টানা চার ম্যাচ জিতে পা রেখেছে ফাইনালে।

কন্ডিশনে অভ্যস্ততা, স্পিনের শক্তিতে এগিয়ে থাকা, ছন্দ, ক্রিকেটারদের সবার ব্যক্তিগত ফর্ম, সব বিবেচনায় এগিয়ে ভারত। তবে ফাইনাল ম্যাচে তো অনেক সমীকরণই বদলে যায়! স্নায়ুর চাপে খেই হারিয়ে ফেলেন অনেকেই।

এই ব্যাপারটিই তুলে ধরলেন গিল। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ভারত, ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরেছে নিউ জিল্যান্ডের কাছে, তাদের কাছেই হেরেছে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে।

গিলের আশা, স্নায়ুর চাপকে জয় করে বড় দল হয়ে ওঠার বার্তা দেবেন তারা।

“বড় ম্যাচের চাপ সবসময়ই থাকে। যেহেতু বড় ম্যাচ, চাপের ম্যাচ, যে দল চাপ বেশি ভালোভাবে সামলাতে পারবে, উপলক্ষকে যারা দমিয়ে রাখকে পারবে এবং এটা ভাববে না যে ম্যাচটি ফাইনাল, তাদের জয়ের সুযোগই বেশি।”

“ইতিহাসের ভালো দলগুলির সম্পর্কে এটিই বলা হয় । ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছিল এরকম, অস্ট্রেলিয়া ছিল এমন। ওই দলগুলি উপলক্ষের চাপকে পাত্তা দিত না এবং নকআউট বা ফাইনালে নিজেদের সেরাটা মেরে ধরত। নিজেদের থেকে চাপটা সরিয়ে নিত তারা। বলাটা সহজ, করাটা কঠিন। কারণ একটি ম্যাচের ওপর এত কিছু নির্ভর করে, তখন তা ভাবনায় আসেই। তবে ভালো দল তারাই, যারা এসব ম্যাচে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে।”

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যে উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত, সেখানেই হবে ফাইনাল ম্যাচটি। শুবমান গিল বলেই দিয়েছেন, উইকেটে ভিন্ন কিছু আশা করছেন না তারা। যেটির মানে, আরেকবার স্পিন-ট্রায়ালের সামনে পড়তে হবে নিউ জিল্যান্ডকে।

গ্রুপ পর্বে দুই দলের লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ড খুব একটা পাত্তা পায়নি ভারতের কাছে। স্পিনাররাই সেদিন গড়ে দিয়েছিলেন বড় পার্থক্য। সেই ম্যাচেই আসরে প্রথমবার চার স্পিনার খেলায় ভারত। চতুর্থ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পেয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে কিউই ব্যাটিং ধসিয়ে দেন ভারুন চক্রবর্তি। ফাইনালেও ভারতের একাদশে চার স্পিনার থাকবে নিশ্চিতভাবেই।

ভারুন আর ভারতের স্পিনারদের সামলানো নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তরই দলেন মিচেল স্যান্টনার। ভারতের স্পিনারদের সমীহ জানিয়ে কিউই অধিনায়ক ভরসা রাখলেন নিজেদের ব্যাটসম্যান আর স্পিনারদের ওপর।

“ওই ম্যাচটি (ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচ) চ্যালেঞ্জিং ছিল। ভারত খুব ভালো খেলেছি। তবে আমরাও কিছু ব্যাপার খুব ভালো করেছিলাম। ওই ম্যাচ থেকে আমরা শিখেছি অনেক কিছু। ভারত সম্ভবত একই দল নিয়ে নামবে। আশা করি আমাদের ছেলেরা এবার আরও ভালো করবে। উইকেট যেমনই হোক, যে চ্যালেঞ্জই আসুক দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে আমাদের।”

“আমরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্পিনার নিয়ে খেলছি এবারই। বল হাতে সবাই ভিন্ন কিছু মেলে ধরে। আমি ও রাচিন রাভিন্দ্রা বোলিং করি আলাদা রকম, মাইকেল ব্রেসওয়েল ও গ্লেন ফিলিপসও তেমনই। আমরা সবাই অলরাউন্ডার হওয়ায় পর্যাপ্ত সিমারও আমরা খেলাতে পারছি। দলের সবাই কোনো না কোনো ম্যাচে নানা সময়ে ভালো করেছে, এটা সবচেয়ে সন্তুষ্টির।”

ফাইনালের আগে নিউ জিল্যান্ডের জন্য খানিকটা দুভার্বনা বয়ে এনেছে ম্যাট হেনরির চোট। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০ উইকেট ও ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচটিতে ৫ উইকেট শিকারি এই পেসার সেমি-ফাইনালে ক্যাচ নিতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন কাঁধে। তার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দল।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্টেই দলকে ফাইনালে তুলে এখন দেশের ক্রিকেটের বড় এক আক্ষেপ ঘোচানোর হাতছানি স্যান্টনারের সামনে। ২৫ বছর আগের সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ই সাদা বলের ক্রিকেটে বৈশ্বিক আসরে নিউ জিল্যান্ডের একমাত্র শিরোপা। দীর্ঘ সেই অপেক্ষার অবসান করতে পারে স্রেফ একটি জয়।

ভারত গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ১১ বছরের আইসিসি ট্রফি খরা ঘুচিয়েছে। তবে ওয়ানডের বৈশ্বিক আসরে ট্রফির তীব্র তাড়নাও তাদের থাকবে। বিশেষ করে,ভিরাট কোহলি ও রোহিত শার্মা আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবেন কি না, সেই শঙ্কা আছে যথেষ্টই। এবারের মতো সুযোগ আর নাও পেতে পারেন তারা। একইভাবে নিউ জিল্যান্ডের নায়ক কেন উইলিয়ামসনেরও এটি হতে পারে শেষ সুযোগ।

সব মিলিয়ে রোমাঞ্চের রসদ আছে অনেক। ভারত ফেভারিট হলেও নিউ জিল্যান্ড এমন এক দল, লড়াইয়ে তারা পিছপা হয় না কখনোই। লড়াইয়ের আবহ সঙ্গীত হয়ে বাজছে স্পিন। দেখার অপেক্ষা, কোন দল সেই সুরে কণ্ঠ মেলাতে পারে নিখুঁতভাবে।

Link copied!