বোলিংয়ে দারুণ শুরু করলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় কিউইদের কাছে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ। এক সোধির স্পিনেই তাসের ঘরের মত হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৫৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। অধিনায়ক লিটন দাস ১৬ বলে মাত্র ৬ রান করে ধরেন সাজঘরের পথ। ওয়ান ডাউনে নামা তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম ইকবাল। দুই তামিম মিলে গড়েন ৪১ রানের জুটি। তানজিদ ১২ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেওয়ার পরপর সৌম্য সরকার শূন্য ও তাওহীদ হৃদয় ৪ রানে আউট হন। তামিম চাপের মুখে উইকেটে থিতু হয়ে সাবলীলভাবে রান করছিলেন। তবে ইশ সোধির শিকার হয়ে থামে ৫৮ বলে ৭ চারে গড়া তার ৪৪ রানের ইনিংস।
সোধি ব্যাট হাতে জীবন পেয়ে জ্বলে ওঠেন বল হাতেও। দক্ষ শিকারীর মত শিকার করছিলেন একের পর এক উইকেট। তামিম বিদায় নেওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে গড়েন ২২ রানের জুটি। তামিমের পর শেখ মেহেদীও শিকার হন সোধির, পূর্ণ হয় এই লেগির পঞ্চম উইকেট। রিয়াদ তখনও লড়াই চালিয়ে গেছেন একাই। তবে শেষপর্যন্ত তামিমের মতো রিয়াদেরও পাওয়া হয়নি অর্ধশতক। ৫০ রান হলেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মালিক বনে যেতেন, তা হয়নি মাত্র ১ রানের জন্য। ৭৬ বলে ৪৯ রানের লড়াকু এক ইনিংস সাজিয়েছিলেন চারটি চার ও একটি ছক্কায়, তবে কাটা পড়েন কোল ম্যাকঞ্চির শিকার হয়ে। তবে এই ইনিংস খেলার পথেই পূর্ণ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের গণ্ডি।
শেষদিকে নাসুম আহমেদ আবারও ব্যাট হাতে সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। ৩০ বলে করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ২১ রান, কমিয়েছে হারের ব্যবধান। শেষপর্যন্ত ৮৬ রানের বড় পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশ, ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে অলআউট হয়ে। কিউইদের পক্ষে সোধি ৩৯ রানের খরচায় শিকার করেন ৬ উইকেট।
প্রথম ইনিংস থেকেই ইশ সোধি ছিলেন আলোচনায়। বল হওয়ার আগেই নন স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট করার পরও তাঁকে ‘জীবন’ দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সোধি পরের ইনিংসে হয়ে গেলেন বাংলাদেশের ‘ঘাতক’। একে একে ৬ উইকেট নিয়ে মিরপুরে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এ লেগ স্পিনার। ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে বোলিং শেষ করেছেন তিনি। এশিয়ার মাটিতে এশিয়ার বাইরের কোনো স্পিনারের এটিই এখন সেরা বোলিং ফিগার।
মিরপুরে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয় কিউইদের ইনিংস। অভিষিক্ত খালেদ আহমেদের প্রথম ওভারে, দলীয় ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরান চাড বোজকে। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তইলেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। ধীরে ধীরে চাপমুক্ত হয় সফরকারী দল।
শেষদিকে নাটকীয়তার জন্ম দেন হাসান মাহমুদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেন ‘মানকাডের’ আশ্রয়। ইশ সোধিকে মানকাড করেন, তৃতীয় আম্পায়ার যাচাই-বাছাই করে দেন আউটের সংকেত। তবে সোধি যখন ফিরে যাচ্ছেন তখন আম্পায়ারের সাথে আলোচনার পর লিটন সোধিকে ক্রিজে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর ফিরেই হাসানকে জড়িয়ে ধরেন সোধি। শেষপর্যন্ত ৫০ ওভার খেলা হয়নি কিউইদের। ৪৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৫৪ রান জড়ো করে নিউজিল্যান্ড। ১৭ রানে জীবন পাওয়া সোধি ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন, হাঁকান তিনটি ছক্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ ও শেখ মেহেদী হাসান তিনটি করে উইকেট শিকার করেন।