ভারতের কঠিন পরীক্ষা আজ

ক্রীড়া ডেস্ক

অক্টোবর ৩১, ২০২১, ০৯:৩১ পিএম

ভারতের কঠিন পরীক্ষা আজ

প্রায় দু’দশক অতিক্রান্ত। ঠিকঠাক ধরলে আঠারো বছর। এই পর্বে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের মুখ দেখেনি ভারতীয় দল। আজ জিততে হবে বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখতে। 

কিউয়িদের বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার শেষ জয় ২০০৩ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান ডে বিশ্বকাপে সেই সুরভিত সাফল্যের নেতৃত্বে থাকা বঙ্গসন্তান সৌরভ গাঙ্গুলি অধুনা বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আর সেদিনের সদ্য কিশোর বিরাট কোহলি এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের জন্মই হয়নি সেই স্মরণীয় জয়ের সময়। নয়াদিল্লিতে ৩২ টাকায় মিলত এক লিটার পেট্রোল। আর রবিবার দুবাইয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের মরণবাঁচন ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া যখন ব্ল্যাক ক্যাপস ব্রিগেডের মুখোমুখি, রাজধানীতে তখন পেট্রোলের দর প্রায় ১১০ টাকা। মাঝখানে গঙ্গা দিয়ে এত জল গড়িয়ে গেলেও বদলায়নি ক্রিকেটের সেই সূচক। ভারতীয় সমর্থকদের আকুতি, ১৮ বছর আগের মধ্য মার্চের সেঞ্চুরিয়ন যেন ফেরে রবিবাসরীয় মরুভূমির দেশে!

সপ্তাহখানেক আগে পাকিস্তানের কাছে বিরাট কোহলিদের দশ উইকেটে পরাজয়ে বিদীর্ণ হয়েছে হৃদয়। ক্রিকেট মহলে এখনও চলছে ময়নাতদন্ত। তবে ভুল শুধরে নেওয়ার ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্ট আদৌ কতটা আগ্রহী, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তারই মধ্যে কাঁটা হয়ে বিঁধছে ইতিহাস। টি-২০ বিশ্বকাপে যে কখনও কিউয়ি পাখির ডানা ছাঁটতে পারেনি ভারত! উইলিয়ামসনদের বিরুদ্ধে শুধু বিবর্ণ অতীত নয়, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভুলে-ভরা বর্তমানও। আবর্তিত হচ্ছে একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্ন। হার্দিক পান্ডিয়া কি বল করতে পারবেন? শট নিতে গিয়ে যাঁর কাঁধে চোট লেগে যায়, দৌড়তে হয় স্ক্যান করতে, তাঁর পক্ষে কি রাতারাতি বোলিং করার মতো ফিট হয়ে ওঠা সম্ভব? নাকি সবটাই ধোঁকাবাজি! চিন্তা বাড়িয়েছেন ভুবনেশ্বরও। বলের স্যুইংই শুধু নয়, কমেছে নিয়ন্ত্রণও। সামি সেরা ছন্দে নেই। জাদেজা রানের গতি আটকাতে ব্যর্থ। তাহলে বুমরাহ ছাড়া নির্ভরযোগ্য বোলার কোথায়? এরপরও কি উপেক্ষিত থাকবে অশ্বিনের অভিজ্ঞতা! ‘লর্ড’ শার্দূল ঠাকুরের অলরাউন্ড দক্ষতাও কি ফের ডাগ-আউটে শোভা পাবে! কাঁচুমাচু মুখে বসে থাকবেন ফর্মে থাকা ঈশান কিষান!

পাকিস্তানের কাছে দুরমুশ হওয়ার পর কোহলির সওয়াল ছিল ‘শিশির তত্ত্ব’। কিন্তু তাতেও ঢাকা পড়েনি প্রথম একাদশ গঠনে তাঁর এবং কোচ শাস্ত্রীর পরিকল্পনার অভাব। রবিবার আরও এক মহা পরীক্ষা তাঁদের সামনে। ট্রেন্ট বোল্ট যে শাহিন আফ্রিদির মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে মাঠে নামবেন তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। নতুন বলের পেস এবং ইনস্যুইং ইয়র্কারে দুই ওপেনারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করবেন তিনি। তবে ভারতকে জিততে হল রোহিত ও রাহুল, দুই ওপেনারকেই নিতে হবে বড় ভূমিকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অধিনায়কোচিত ইনিংসের পর কোহলির ব্যাটও স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু, চিন্তায় রাখছে সূর্যকুমার, পন্থ, হার্দিকদের নিয়ে গড়া মিডল অর্ডার। পাঁচ বছর আগে নাগপুরে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে মাঝের ওভারে রানের গতিতে লাগাম টেনেই ভারতকে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেদিনের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি এখন মেন্টর। তাঁর কাছ থেকেই টোটকার আশায় দল। দরকার স্লগ ওভারে বড় শটও। সেই ভূমিকাই বা কে নেবেন!

সমস্যা উল্টোদিকের শিবিরেও রয়েছে। উইলিয়ামসনকে পুরো ফিট দেখাচ্ছে না। মার্টিন গাপটিলও অনিশ্চিত। ফলে অস্তিত্বের ম্যাচের আগে স্বস্তিতে থাকতে পারছে না কিউয়িরাও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের থেকে কম রানের পুঁজি নিয়েও যথেষ্ট লড়াই করেছিল নিউজিল্যান্ড। হারলেও অসহায় আত্মসমর্পণ করেনি। নাছোড়বান্দা এই মনোভাবটাই উইলিয়ামসনের দলের প্রধান ইউএসপি।

সেমি-ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য রবিবার জিততেই হবে দুই দলকে। পরাজয় মানেই বিশ্বকাপ অভিযানে কার্যত দাঁড়ি। তবে ভারতীয় দল অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বহুবার। অবিশ্বাস্যভাবে নক-আউট করেছে বিপক্ষকে। সেই জেদই বড় ভরসা। অনন্ত চাপেই যে জ্বলে ওঠে বিরাট ব্রিগেড!

Link copied!