মে ১২, ২০২৩, ০১:৪৫ পিএম
আগামী রবিবার নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার। এছাড়াও টেকনাফ উপকূল ও প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে এসব তথ্য।
ট্যুারিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আসন্ন বিপদ এড়াতে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে চলে এসেছেন অনেকে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের তীব্রতা বেশি হওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার সহস্রাধিক সেন্টমার্টিন সৈকতের কাছে বসবাসকারীরা নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ চলে যাচ্ছেন। তবে সাগর এখনো শান্ত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী রবিবার দুপুরের দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অবশ্য এর আগে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকা এবং সেই সঙ্গে দেশের অন্যত্র বৃষ্টি হবে। আর ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের টেকনাফের দক্ষিণ দিক দিয়ে যাবে বলে জানান আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মূলত টেকনাফে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কক্সবাজারের অন্য এলাকাতেও হতে পারে।
সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপারসাইক্লোন বলা হয়।
অন্যদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ ছাড়া ১২ মের মধ্যে চাষিরা যাতে মাঠ থেকে পাকা ধান ঘরে তোলেন এবং লবণ যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করেন, সে বিষয়ে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিসিক, কক্সবাজারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, মোখা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়ে যেখানে ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া জেলার জন্য আপাতত ২০ লাখ নগদ টাকা, ১৫০ টন চাল, ৩ টন বিস্কুট, ৩ টন ড্রাই কেক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ক্রমানুসারে প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধও সরবরাহ করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কক্সবাজারের উঁচু উঁচু ভবন (বিশেষ করে হোটেল-মোটেল) আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৫ টন চাল, আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে এমন চারটি উপকূলীয় উপজেলা কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে দেড় লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ৪৯০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া ৫ লাখ টাকা এবং ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা এলেও দ্বীপে এখনো বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়নি। এরপরও প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। দুর্যোগ শুরু হলে জানমাল রক্ষায় কারা কোথায় অবস্থান করব, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে উঁচু ভবনগুলো।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আনার পূর্বপ্রস্তুতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টিম, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।