মুখোমুখি লড়াইয়ে ভিন্ন লক্ষ্য ফরচুন বরিশাল আর মিনিস্টার ঢাকার। আগেই কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করা বরিশালের এ ম্যাচ না জিতলেও খুব বেশি ক্ষতি হতো না। চাইলে টানা খেলার ধকল সামলাতে প্লে-অফের আগে দলের মূল খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে পারতো তারা। তবে সে পথে হাঁটেনি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দল। এটাই যেন কাল হলো ঢাকার। যখন জিতলেই প্লে-অফ নিশ্চিত, সে ম্যাচেই কীনা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে বসলেন ঢাকার ক্রিকেটাররা।
ব্যতিক্রম একমাত্র তামিম ইকবাল। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। বাকি ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলারাও ছিলেন নির্বিষ। এতে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১২৮ রান তোলা ঢাকা- বরিশালকে আটকাতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের ২৯ বলে ৫১ রানের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেট এবং ২৭ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল। এ ম্যাচ হারের ফলে প্লে-অফের ভাগ্য যদি-কিন্তুতে ঝুলে রইলো ঢাকার।
শনিবার সিলেট-চট্টগ্রাম ম্যাচে যদি চট্টগ্রাম এবং খুলনা-কুমিল্লা ম্যাচে যদি কুমিল্লা জয় পায় তবে বিদায় বলতে হবে ঢাকাকে। এ দুই দলের যেকোনো একটি দল হারলে প্লে-অফের টিকিট পাবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নামে ঢাকা। দীর্ঘদিন পর তামিম ইকবালের সাথে এদিন ওপেনারের ভূমিকায় ফেরেন নাঈম শেখ। তবে এবারের টুর্নামেন্ট বিভিন্ন ব্যাটিং পজিশনে ব্যাট করা নাঈম নিজের প্রিয় জায়গা ওপেনিংয়ে নেমেও সুবিধা করতে পারেননি। ৯ বলে মাত্র ৬ রান করে আউট হন বাঁহাতি পেসার শফিকুলকে খেলতে গিয়ে।
নাঈমের দেখানো পথে হেঁটে একে একে সাজঘরে ফেরেন জহুরুল ইসলাম (২) মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৩) ও শামসুর রহমান শুভ (৩)। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত ধরে খেলেন তামিম। শুরুতে খোলস বন্দি থাকলেও পরে দলের রান বাড়ানোর চেষ্টায় হাত খুলে খেলেন। ৬৮ রানে চতুর্থ উইকেটের পতনের পর তামিমের সঙ্গে যোগ দেন শুভাগত হোম। দুজনের ৪১ রানের জুটির মাঝে এবারের বিপিএলে নিজের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন তামিম।
তবে দলের ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি। মেহেদী হাসান রানার শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫০ বলে করেন ৬৬ রান, হাঁকান ৯টি চার ও ১টি ছক্কা। তামিমের ৬৬ রানের সঙ্গে শেষদিকে শুভাগতর ২৭ বলে অপরাজিত ২১ রানের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ঢাকার সংগ্রহ দাঁড়ায় মোটে ১২৮ রান। বরিশালের পক্ষে মেহেদী হাসান রানা, ডোয়াইন ব্রাভো ও শফিকুর ইসলাম ২টি করে উইকেট শিকার করেন। সাকিব-মুজিবের দখলে ১টি করে।
১২৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি বরিশালকে। ফর্মহীনতায় ভোগা ওপেনার ক্রিস গেইল ৭ রানে আউট হলেও দলকে চাপে পড়তে দেননি ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসী ব্যাটিং করা মুনিম শাহরিয়ার। কাইস আহমেদের বলে আউট হয়ে ফেরার সময় এই তরুণের নামের পাশে ২৫ বলে ৩৭ রান। ১৪৮ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি সাজান সমান ৩টি করে চার-ছয়ে।
মুমিনের আউটের পর নাজনুল হোসেন শান্তকে অন্যপ্রান্তে দর্শক বানিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সাকিব। টুর্নামেন্টজুড়ে বেশ আগ্রাসী ব্যাট করা সাকিব এদিন আরো বেশি বিধ্বংসী। ইনিংসের ১২তম ওভারে আফগান বোলার আজমতউল্লাজ ওমরজাইকে স্বস্তির শ্বাস নিতে দেননি। ৪টি চারের সঙ্গে মারে একটি ছক্কা। সাকিবের এমন ধ্বংসাত্মক রূপ গ্যালারিতে বসে দেখেছেন তার সহধর্মিণী উম্মে আহমেদ শিশির।
সাকিব যখন ক্রিজে আসেন তখন জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন ৮৩ রান। যার ৫১ রানই নিজ ব্যাটে তুলেছেন। মাত্র ২৯ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ২টি ছয় এবং ৪টি চারের সাহায্যে ২৯ বলে ১৭৬ স্ট্রাইক রেটে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। সঙ্গে শান্তর ২৮ বলে ২৮ রানের সুবাদে ৮ উইকেটের জয় পায় বরিশাল। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে তুলেছেন সাকিব। এনিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে সেরা পারফর্রমার হলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। সাকিবের এমন পারফরম্যান্স আগামী ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নিলামে কতটা প্রভাব ফেলবে এখন সেটিই দেখার।