ব্যবসায়ীদের সুবিধা, অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ আর জনগণের আক্ষেপ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১০, ২০২২, ০৪:২৪ এএম

ব্যবসায়ীদের সুবিধা, অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ আর জনগণের আক্ষেপ

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে ঋণগ্রস্ত হবার বাজেট বলছে অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণ। তবে এই বাজেটের কিছু অংশ বাদে ইতিবাচক বলছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে রাজনীতিবিদরা রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। 

সাধারণ মানুষের বাজেট ভাবনা

দেখতে ক্লিক করুন

কল্যাণমুখী বললেন ব্যবসায়ীরা 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী বলে উল্লেখ করেছেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সাধারণ মানুষের উপকারের জন্যও অনেক প্যাকেজ এনেছেন।

এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কালোটাকা সাদা করা পছন্দ করেন না, কারণ এতে সৎভাবে যারা ব্যবসা করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হবেন। তারা নিরুৎসাহিত হবেন বলেও তিনি মনে করেন।

এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও নেতৃবৃন্দদের পক্ষ থেকে বাজেটকে ইতিবাচক আকারে দেখছে। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বাজেটকে সাধুবাদ জানায়। গ্রিণ ফ্যাক্টরিতে করহার বহাল রাখা পাশাপাশি রেমিট্যান্সে প্রণোদনায়ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।

সঠিক পদক্ষেপ নেই জানায় অর্থনীতিবিদরা

তবে ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক দিকের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে অর্থনীতিবিদরা। সিপিডির বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয় মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটে বহুবার এসেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো একেবারেই পর্যাপ্ত নয় বলে জানায় তারা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট দেওয়া হলো, তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। পাশাপাশি বৈদেশিক খাতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের চাপ। আমাদের যে প্রকল্প বাস্তবায়ন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন এসব ক্ষেত্রেও অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের শুরুতেই ছয়টি মূল উদ্দেশ্য অর্থমন্ত্রী বলেছেন। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটে বহুবার এসেছে। আমরা যদি দেখি মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। আমাদের বাজেট প্রস্তাবনায় বলেছিলাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যে কর আছে সেগুলোকে উঠিয়ে দেওয়া। কিছু কিছু পণ্যের ওপর কর উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়।

মুখোমুখি রাজনীতিবিদরা

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বললেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।

তিনি বলেন,করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এমন বাস্তবতায় বিশাল বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলতে হচ্ছে।

আর জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটকে গরিবের বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আসন্ন বাজেট দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

যারা বাজেট ঘোষণা করছে তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়; বাজেট ঘোষণা করার কোন অধিকার তাদের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার নিজেদের লুটপাটের জন্য বাজেট তৈরি করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বাজেট নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছে সাধারণ জনগণ

বাজেট প্রস্তাবের দিনেই সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে লিটার প্রতি ২০৫ টাকা হয়েছে। যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে বলে জানায় তারা।

কারওয়ার বাজারের ক্রেতা শফিকুর রহিম বলেন, বাজেট মানেই আতঙ্ক। নতুন করে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এখন দেখছি ঘোষণা দেয়ার আগেই সবকিছুর দাম বাড়তি। আগে রয়ে সয়ে কাটাচ্ছিলাম কিন্তু এখন ঋণ করে চলতে হবে।

এদিকে বাজেটের প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে সকলে শ্রেণীর মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজান রহমান বলেন, গত বছরে হলে থাকতে তিন চার হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখন ৫ হাজারেও কুলাতে পারছিনা। বাজেটের প্রভাব প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর পড়ে।

Link copied!