দেশে সক্রিয় অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণের কাজের সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে এক মাস সময় দেয়া হলেও আবার সময় বাড়ানো হল।
সোমাবার (২ আগস্ট) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কাজটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে গ্রাহকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং নির্ভুলভাবে শেষ করতেই এটি করা হয়েছে। এছাড়া এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি মোবাইল সেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর আছে, যা মোবাইলটির আইডেন্টিফিকেশন টেক। মোবাইল যখন আমদানি করে তখন আমরা নম্বরসহ এর অনুমতি দেই। যারা বাংলাদেশে প্রোডাকশন করে সেটারও অনুমোদন দেয়া হয় নম্বরসহ। এর বাইরে কিছু মোবাইল স্মাগলিং হয়। বিদেশ থেকে যে কেউ দুটি মোবাইল আনতে পারেন। আবার কেউ কেউ ট্যাক্স দিয়েও নিয়ে আসেন। আমাদের কাছে যে বিষয়টি জটিল ছিল তার প্রথমটি হচ্ছে আগে তো সিমের কোনো নিবন্ধন ছিল না। প্রথমে সিম নিবন্ধন করলাম। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে সিম খুঁজে পাবেন। কিংবা সিম থাকলে এনআইডি নম্বর খুঁজে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এরপর দেখতে পাচ্ছি, বেআইনি মোবাইল সেট আমদানি বা চোরাচালান অব্যাহত আছে। এটার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আমাদের এখানে যারা বৈধ ব্যবসা করেন এবং লোকাল ম্যানুফ্যাকচাররা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিন্তু আমরা এই সিস্টেমটা ডেভেলপ করেছি। এই সিস্টেম ডেভেলপ করার পর যেসব মোবাইল নিবন্ধিত হয়নি সেগুলো ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য বলেছিলাম। এ ব্যাপারে বলেছি, সিম দিয়ে যেসব মোবাইল চালু আছে সেগুলোর নিবন্ধন দেয়ার জন্য। বৈধ-অবৈধ সেগুলো আমরা যাচাই করিনি।’
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘প্রায় ১৭ কোটি সিম আর ১০ কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্ত করা খুবই ডিফিকাল্ট কাজ ছিল। ৩০ জুলাই পর্যন্ত একটা ডেডলাইন দিয়েছিলাম। এই বিশাল ডাটাবেজের কাজটি শেষ করার জন্য অপারেটররা কিছুটা সময় চেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি।’
সময় বাড়ানোর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের লোকজন মোবাইল সেট ব্যবহার করেন। তাদের অনেকেই হয়তো আইএমইআই নম্বর কোথায় থাকে তা জানেন না। এদের বাদ দিলে চলবে না। মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ারে এবং বিভিন্নভাবে যাতে তাদের কাস্টমারদের সচেতন করে কীভাবে আইএমইআই ভেরিফাই করা যায় সেজন্য নির্দেশ দিয়েছি। এসব কারণে তারা আপাতত তিন মাস সময় নিয়েছে। এ সময় দিয়ে অপারেটরদের দায়িত্ব দিয়েছি, যাতে ডাটাবেজগুলো সুষ্ঠুভাবে শেষ করা যায়। কোনো ধরনের ভুল না থাকে।’
সেপ্টেম্বরের পরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তখন নিবন্ধনের বাইরে কী কী সেট আছে তা সিম দিয়ে শনাক্ত করতে পারব। তারপর দোকানে দোকানে অভিযান চালিয়েও খুঁজে বের করতে পারবো নিবন্ধনের বাইরে কোন সেটগুলো আছে।’
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোমওয়ার্ক করব, যাতে কোনো রকমের জটিলতা না পাই। একটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে চাই। সাধারণ মানুষের যেন কোনো রকমের কষ্ট না হয় সেটা নিশ্চিত করব। কারণ সাধারণ মানুষ তো এত সব জেনে বুঝে মোবাইল কেনে না এবং এটা তার অপরাধ নয়। কেউ ১ হাজার টাকার একটা সেট কিনেছেন। কিন্তু ১ হাজার টাকার সেট কেনার সময় সে কি আর আইএমইআই দেখবে কিংবা ভেরিফাই করবে? তারপর আবার এরকম হতে পারে বিদেশ থেকে কেউ উপহার দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা একটা জায়গায় যেতে পারবো।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা সফটওয়ারটা এমনভাবে তৈরি করেছি যে ঘরে বসেই যেসব মোবাইল সেট অনিবন্ধিত পাব সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে পারব। এ ক্ষমতা যেহেতু আমাদের আছে সেহেতু এ স্টেপটা আমরা যেকোনো সময় নিতে পারবো। একই সাথে ওই দক্ষতা অর্জন করতে হবে যে, আমি বন্ধ করে দিলাম তারপর কমপ্লেইন আসলো যে মোবাইলটা সে গিফট আকারে পেয়েছিল কিংবা বিভিন্নভাবে পেয়েছে। ওগুলোর সমাধানও যেন আমরা করতে পারি সেজন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর এটার অ্যাকশন দেখতে পাবেন।’
চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। অবৈধ মোবাইল সেট বৈধ করার সময় পাবেন সবাই। এখনই কারও মোবাইল সেট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করা হবে না। নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল সেট হারিয়ে গেলে তা নিষ্ক্রিয় করা যাবে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার মোবাইল নিবন্ধিত কি-না
বিটিআরসি জানায়, এনইআইআর সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১২১ ডায়াল করে এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে। কোনো কারণে মোবাইল অপারেটররা সেবা দিতে অপারগ হলে বিটিআরসির হেল্প ডেস্ক নম্বর ‘১০০’ ডায়াল করে এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে। এনইআইআর সংক্রান্ত সব তথ্য এই লিংকে neir.btrc.gov.bd দেয়া রয়েছে।
১ জুলাই থেকে *১৬১৬১# ডায়াল করে ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের বর্তমান অবস্থা যাচাই করা যাচ্ছে। প্রথমে ওই নম্বরে ডায়াল করার পর আইএমইআই নম্বর চাওয়া হবে। ওই নম্বর দিয়ে সেন্ড করার পর পরবর্তী মেসেজে জানা যাবে গ্রাহকের মোবাইল সেট নিবন্ধিত কি-না। মোবাইল কোম্পানি থেকে এটি জানিয়ে দেয়া হবে।
এছাড়া কারও হ্যান্ডসেট চুরি হলে যথাযথ ডকুমেন্ট সাবমিট করে তা নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা থাকবে। চলমান পরীক্ষাকাল (তিন মাস) অতিবাহিত হলে অবৈধ হ্যান্ডসেট নিষ্ক্রিয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।