মার্চ ২৪, ২০২২, ০৪:৫৫ পিএম
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ‘অবন্ধু’ দেশে বিক্রি করা গ্যাসের মূল্য রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করা হোক— এমনটাই চায় রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার এ কথা বলেছেন। এ পদক্ষেপ ইউরোপের জ্বালানি সংকটকে আরও জটিলতর করবে, এমন আশঙ্কায় এ অঞ্চলে গ্যাসের দাম বেড়েছে।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন চালানোর পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বসহ ইউরোপের দেশগুলো নানাবিধ অবরোধ আরোপ করে। কিন্তু গৃহস্থালির কাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গোটা ইউরোপই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়ার জ্বালানি খাতে অবরোধ আরোপ করা হবে কি না, এ নিয়ে এখনও দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
রয়টার্স বলছে, পুতিনের বার্তা স্পষ্ট, ‘তোমরা যদি আমাদের গ্যাস চাও, আমাদের মুদ্রা রুবল ক্রয় করো।’ অবশ্য ইউরোর মাধ্যমে লেনদেনে বর্তমান যে চুক্তিগুলো আছে, রাশিয়ার একপক্ষীয়ভাবে সেগুলো পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা আছে কি না, তা অস্পষ্ট।
পুতিনের আকস্মিক ঘোষণার পর রুবলের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। বুধবার কিছু ইউরোপীয় পাইকারি সরবরাহে গ্যাসের দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ব্রিটিশ ও ডাচ পাইকারি সরবরাহেও গ্যাসের দামে উল্লম্ফন দেখা যায়। ইউরোপের পুরো গ্যাস ব্যবহারের ৪০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। চলতি বছর প্রতিদিন রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস আমদানি ২০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ইউরোয় ওঠানামা করছিল।
সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বৈঠকে পুতিন বলেন, পরিমাণ ও মূল্য অনুযায়ী রাশিয়া অবশ্যই প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখবে, যা আগে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ঠিক করা আছে। পরিবর্তনটা আসবে কেবল অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে, এটি রুশ রুবলে পরিবর্তিত হবে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক পুতিনের দাবিকে চুক্তি ভঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ গ্যাসের অন্য ক্রেতারাও একই কথা বলেছেন। পোলিশ সরকারের একটি সূত্র বলেছে, ‘বর্তমান চুক্তিসহ এটি অর্থ পরিশোধ বিধি লঙ্ঘনের শামিল।’ চলতি বছরের শেষ নাগাদ বর্তমান চুক্তি শেষ হওয়ার পর গ্যাজপ্রমের সঙ্গে তাদের নতুন করে চুক্তি সইয়ের ইচ্ছা নেই বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। বড় বড় ব্যাংকও রুশ সম্পদের বিপরীতে লেনদেনে অনিচ্ছুক, যা পুতিনের দাবিকে আরও জটিলতর করেছে।
ডাচ গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এনেকো গ্যাজপ্রমের জার্মানির একটি শাখা থেকে ১৫ শতাংশ গ্যাস কিনে থাকে। ইউরোয় লেনদেনে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র বলেন, ‘ওই চুক্তির শর্তে পরিবর্তন আনার বিষয়ে আমরা একমত হব, এমনটা ভাবছি না।’
গ্যাজপ্রমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ জানুয়ারি নাগাদ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে কোম্পানিটির বিক্রি করা ৫৮ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ইউরোয় লেনদেন হয়েছে। আর মার্কিন ডলারে এ লেনদেনের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্যের বড় অংশই ডলার অথবা ইউরোর মাধ্যমে হয়, যা বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রায় ৮০ শতাংশ।
ইউক্রেনে হামলার পর কোন কোন দেশ বন্ধু, আর কোন কোন দেশ বন্ধু নয়—এমন তালিকা করেছে রাশিয়া। এ তালিকায় মূলত রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতাকারীদের রাখা হয়েছে। রুশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্ধু নয়, এমন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন থেকে পর্যালোচনা করবে সরকারের একটি কমিশন।
এদিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক নির্দেশনায় বলেছে, এসব দেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়ার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে হলে রাশিয়ার কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো মুদ্রা দিয়ে রুবলের সমপরিমাণ অর্থ জমা করতে হবে।