যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আফগান মিত্রকে সাময়িকভাবে বাংলাদেশে স্থান দেওয়ার অনুরোধ করেছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করেছে ঢাকা। সোমবার (১৬ আগস্ট) রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'মার্কিন প্রশাসন আমাদের বলেছে, আফগানিস্তানে তাদের বন্ধু-প্রতীম অনেক লোক আছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত করছে। বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। আশ্রয়দাতা হিসেবে বংলাদেশের সুনাম রয়েছে। ফলে এসব আফগান নাগরিককে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।'
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, 'আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, কোন কোন দেশে তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর নাম বলতে পারলো না। কতজন আফগান নাগরিককে, কতো দিনের জন্য আশ্রয় দিতে অনুরোধ করা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সাময়িক আশ্রয় দিতে হবে। আমরা এসব শুনে বলে দিয়েছি যে, রোহিঙ্গাদের নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি। ছোট দেশ হিসেবে আমাদের জনসংখ্যাও বেশি। নতুন করে কাউকে আশ্রয় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।'
পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ এবং মনে করছে যে, এই ঘটনা এ অঞ্চলে এবং এর বাইরেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী আফগানিস্তান হচ্ছে দেশটিতে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি।
বাংলাদেশ আফগানিস্তানে বিদেশি নাগরিকসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দেশটির সকল অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আফগানিস্তানের জনগণকেই তাদের দেশ পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যতের গতিপথ তাদের নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আমরা আফগানিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ, দায়িত্বশীল এবং অবদানকারী সদস্য হিসাবে দেখতে চাই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আফগানিস্তানের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পেরে বাংলাদেশ খুশি।
বিবৃতিতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চলে একসঙ্গে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নীতি বাস্তবায়নে আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে ঢাকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিজেকে আফগানিস্তানের সম্ভাব্য উন্নয়ন অংশীদার এবং বন্ধু বলে মনে করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা, কমিউনিটি হেলথকেয়ার, স্যানিটেশন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আইসিটি-র মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সেরা অনুশীলনগুলো ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।
গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে কর্মরত বাংলাদেশি এনজিওগুলোর সফল প্রসার সেই দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
আফগানিন্তান সার্কের সহযোগী সদস্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশে যে অমূল্য সহায়তা দিয়েছিল, বাংলাদেশ তা স্মরণ করে।