নভেম্বর ১৩, ২০২১, ০৪:৩৯ পিএম
রাজধানীতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে সাহায্য চাইতে ওঠা ১০ বছরের মরিয়ম নামে এক শিশুকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় চালক নরাজু মিয়া ও তার সহযোগী ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ওই ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার পর থেকে তারা পালিয়ে ছিলেন। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চালক রাজু মিয়া এবং তার সহযোগী ইমরান হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। সকালে যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছালে মরিয়ম যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে গাড়িতে ওঠে। হেলপার ইমরান হোসেন এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিল। ইমরান তখন চালককে বলে, একজন ছিন্নমূল পথশিশু গাড়িতে উঠে অর্থ সাহায্য চাচ্ছে। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে সে রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলে। এ সময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়।
চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্ত হয়ে বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ চালক জোরে গাড়ি চালানো শুরু করলে বাসের দরজা থেকে ছিঁটকে রাস্তায় পড়ে ঘটনাস্থলেই মরিয়মের মৃত্যু হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরে মরিয়মের বাবা রনি মিয়া ভাটারা এলাকায় একটি মেয়েশিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে জানতে পেরে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে ওইদিন রাতে অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, ‘মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেটকারচালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে, অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করত। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাস যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।’
সংবাদ সম্মেরনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার চালক রাজু মিয়া ছয় বছর ধরে রাইদা পরিবহনে গাড়ি চালাতেন। আর তার সহযোগী (হেলপার) ইমরান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ছয় মাস আগে ইমরান রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ অনুযায়ী তিনি বলেন, দেখা গেছে মরিয়ম হেঁটে হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহতাবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, এখানেই মৃত্যু হয় শিশু মরিয়মের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল, যেন দ্রুত নেমে যায়। নিহত মরিয়ম বাস থেকে নামানোর সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।