দেশে নদী দখলদার ৬৩ হাজারেরও বেশি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১, ০৪:২২ এএম

দেশে নদী দখলদার ৬৩ হাজারেরও বেশি

প্রতিবছরই বাড়ছে নদী দখল। নদী দখলের বিপরীতে উদ্ধারের পরিমান আরও কম। এ ছাড়া নদীর যেসব জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে তা-ও বাতিল হয়নি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয় এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫ হাজার নতুন নদী দখলদার বৃদ্ধি পেয়েছে।

বছরে নদী দখলদার বেড়েছে ৫ হাজার 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ২০১৯ সালে চিহ্নিত করা দখলদারের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০। উচ্ছেদ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৯টি দখল। একই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে নতুন দখলদারের সংখ্যা পাঁচ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে সারা দেশে ৬৩ হাজার ২৪৯। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে নামমাত্র। নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে উচ্ছেদ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৯টি। উচ্ছেদের হার ৩২.৩৭ শতাংশ। কিন্তু নতুন করে দখল হওয়ায় এবং করোনাকালীন পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকায় উচ্ছেদের হার কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৯.৬৬ শতাংশ।

অর্থায়ন ও সক্ষমতার অভাব

পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সক্ষমতা না থাকার কারণে জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাশিত উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি বলে কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। এই অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন।

নতুন নতুন পদ্ধতিতে নদী দখল

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদীর তীরে সরকারি স্থাপনার আশেপাশে দখল শুরু করে। এরপর তা বিস্তৃত হয়। এমন ভাবেই নদী দখল হচ্ছে।

এছাড়া লীজ নেয়ার অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, লীজ দেয়ার পর তা তদারকিতে থাকে না কেউ। লীজ নিয়ে নদী ভরাট, নির্দিষ্ট সীমানার বাহিরে ভোগ করা। নবায়ন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর ফলে নদী দখলদাররা নিত্য নতুন কৌশলে দখল করছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কামরুন নাহার বলেন, নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং নদী দখল ঠেকানোর জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এছাড়া সকল প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ও সমন্বয়ের প্রয়োজন।

বেশি দখল খুলনায়

নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি নদী দখলদার খুলনা বিভাগে। সেখানে দখলদারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৪৫। এই বিভাগে ২০১৯ সালে উচ্ছেদ করা হয়েছে চার হাজার ৮৯০টি অবৈধ দখলদারকে। নদী দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৪৪। উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭৬ জনের অবৈধ স্থাপনা।

ঢাকা বিভাগে নদী দখলদারের সংখ্যা আট হাজার ৮৯০; উচ্ছেদ করা হয় এক হাজার ৪৫২ জনের পাঁচ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা। ঢাকা জেলায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ইছামতী, বালু, বংশী, গাজীখালী, কালীগঙ্গাসহ মোট ১১টি নদ-নদী ও ২০১টি খালের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। ঢাকা জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ছয় হাজার ৭৫৮; উচ্ছেদ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৯৯ জনের স্থাপনা। নারায়ণগঞ্জে ৯টি নদী ও ২১৮টি খাল রয়েছে। সেখানে নদী ও খাল দখলদারের সংখ্যা ৭৮৫। মানিকগঞ্জে নদীর সংখ্যা ১৬, আর খাল ১১৭টি; দখলদারের সংখ্যা এক হাজার ৩৯৯। ফরিদপুরে ১৩টি নদী ও ১৫টি খাল রয়েছে; দখলদারের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৪। টাঙ্গাইলে নদী দখলদারের সংখ্যা এক হাজার ৭৮৮।

 

Link copied!