লাতিন আমেরিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তির দেশ ব্রাজিল। যুগে যুগে এই দেশে তৈরি হয়েছে পেলে, জিকো, রবার্তো কার্লোস, রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকার মতো বিশ্বমানের তারকা। এসব তারকাদের হাত ধরেই রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সেলেসাওরা। সেসব কিংবদন্তিদের দেখানো পথে গত এক যুগ ধরে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন নেইমার জুনিয়রও।
ব্রাজিলের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের ১০ নম্বর জার্সি যার গায়ে থাকে তার প্রতি প্রত্যাশার ভারটাও একটু বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু গত দুই বিশ্বকাপে নেইমার এই প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিলন ঘটাতে পারেননি।
নানা ধরনের বিতর্কে জড়ানো নেইমারের ক্যারিয়ারের নিয়মিত ঘটনা। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মাঠে বড় মঞ্চে পারফর্ম না করতে পারা।
বাছাইপর্বে ১৬টি গোল করেছেন বটে কিন্তু দলটার নাম যখন ব্রাজিল তখন বাছাইপর্বের পারফরম্যান্স খুব কম সমর্থকই মনে রাখবেন, যদি বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারেন।
মেসি-রোনালদোর সাথে নেইমারের নাম উচ্চারিত হয়, কিন্তু প্রতিদান তিনি দিয়েছেন কমই।
কোচ তিতের অধীনে ব্রাজিল গত ২৯ ম্যাচে হারেনি, শেষ ১৭ ম্যাচের ১৩টিতে কোন গোলও হজম করেনি।
একই সাথে এই ২৯ ম্যাচে ব্রাজিল গড়ে আড়াইটি করে গোল দিয়েছে প্রতিপক্ষের জালে।
তবুও বিশ্বকাপের আগে দল নিয়ে এবং যথাযথ পজিশনে যথাযথ ফুটবলার খেলানো নিয়ে কিছু দুশ্চিন্তার জায়গা আছে ব্রাজিলের।
নাম্বার নাইন কে হবেন?
পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ফুটবলে জনপ্রিয় হওয়ার আগে ফুটবল সমর্থকরা রোনালদো বলতে একজনকেই চিনতো, তিনি ব্রাজিলের নয় নম্বর জার্সি পড়তেন।
বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ফুটবলারদের একজন রোনালদো নাজারিও, যিনি অলস ভঙ্গিমায় গোল করতে পটু ছিলেন, তারই প্রত্যক্ষ অবদানে ব্রাজিল নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা নিশ্চিত করেছিল ২০ বছর আগে।
রোনালদো অবসরে গেছেন ১১ বছর হয়ে গেছে।
ব্রাজিলের লক্ষ্য ছয় নম্বর বিশ্বকাপ জয়
ফিফা বিশ্বকাপে ব্রাজিল এখনও পর্যন্ত সবার ওপরে আছে পাঁচটি বিশ্বকাপ নিয়ে, ২০ বছর আগে শেষ বিশ্বকাপ জিতলেও এখনও প্রতি বিশ্বকাপের আগেই ব্রাজিলকে ধরা হয় ফেভারিট দল।
এটা দলটার ঐতিহ্য ও পরিচিতির কারণে।
বিশ্বব্যাপী যেসব আন্তর্জাতিক ফুটবল দলের প্রচুর সমর্থক আছে, তাদের মধ্যে ব্রাজিল একটি।
ফুটবলের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট দ্য অ্যাথলেটিক তাদের বিশ্লেষণে লিখেছে, ব্রাজিলের ছয় নম্বর শিরোপা, যাকে ‘হেক্সা’ বলা হচ্ছে সেটা অর্জনের সামর্থ্য এই স্কোয়াডের আছে।
দ্য অ্যাথলেটিকে বলা হচ্ছে ব্রাজিলের স্কোয়াডের গভীরতা যে কোনও দলের জন্য ঈর্ষণীয়।
ফুটবল লেখক জেমস হর্নক্যাসলের মতে, “ব্রাজিলের এই দলটিতে নেইমারের সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করা গেলে এবার ব্রাজিল ছয় নম্বর বিশ্বকাপ জিততেও পারে।”
কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে পুরো ব্রাজিল দল ছিল অপ্রতিরোধ্য। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সবার আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল তারা। বাছাইপর্বে নেইমার নিজে আট গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন আরো আট গোল। আর এর মাধ্যমে জাতীয় দলের দুই সতীর্থ রিচার্লিসন ও লুকাস পাকুয়েতার সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
ব্রাজিলের সাবেক লিজেন্ড কাফু বলেছেন, ‘নেইমার যেহেতু ভালো ফর্মে আছে সে কারণে এবার আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনাও আছে। কারণ সে এমন একজন খেলোয়াড় যে সহজেই প্রতিপক্ষের সাথে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’
শেষ পর্যন্ত নেইমার যদি সফল হন তবে হয়তোবা ব্যালন ডি’অরের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে, কিন্তু মূলত তার লক্ষ্য অতীত বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতিগুলো ক্যারিয়ার থেকে মুছে ফেলা। গত বছর ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকায় তিনি দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু মারাকানা স্টেডিয়ামে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে দলকে জয় উপহার দিতে পারেননি।
সূত্র: বিবিসি