যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জিতে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলা নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছিল ইরান। ড্র করলেও সে আশা থাকবে, একই সময়ে শুরু হওয়া ‘বি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে ওয়েলস যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে না পারে। এমন হিসাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খেলতে নেমেছিল ইরান। শুরুটা বেশ ভালই ছিল। কিন্তু শেষতক আর হল না। ইরানের খেলোয়াড়েরা অনেকটাই হাল ছেড়ে দিল।
শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যে বুঝতে পারলেন ইরানি খেলোয়াড়রা, এভাবে সম্ভব নয়। তাঁর চেয়ে বরং গোল বাঁচানোর চেষ্টা করাটাই ভালো। রক্ষণটা জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণে গোল করার সুযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছিল ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের যে ঢেউ নিয়ে ইরানের রক্ষণে আছড়ে পড়েছে, তা বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি তাঁরা।
ইরানের রক্ষণদেয়াল ভাঙে ৩৮ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে শুরু হওয়া একটি আক্রমণ থেকে বক্সের ডান দিকে বল যায় ওপরে উঠে আসা রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তের কাছে। উড়ে আসা বলটি হেডে বক্সের ভেতরে ফেলেন তিনি। আগুয়ান ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক ডান পায়ের টোকায় সেই বল পাঠান জালে। শেষ পর্যন্ত পুলিসিকের এই গোলেই ১–০ গোলে জিতে ইংল্যান্ডের সাথে শেষ ষোলোতে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করতে ওয়েলসকে ১–০ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
শেষ ষোলোতে যুক্তরাষ্ট্র খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আর ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ হলো সেনেগাল।
এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে উঠল যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে তাঁরা শেষ ষোলোতে খেলেছে ১৯৩৪, ১৯৯৪, ২০০২, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছে তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্র কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারত ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও। সেবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের কাছে হেরেই বাদ পড়তে হয়েছে দলটিকে। বিশ্বকাপে আজকের আগে এটাই ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে ‘শত্রু’ দুই দেশের একমাত্র সাক্ষাৎ।
কাতার বিশ্বকাপে এবার ইরান খেলতেই এসেছে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সাথী করে। দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত মানুষের সমর্থনে স্পেনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে দলটির খেলোয়াড়েরা জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলাননি। এ নিয়ে বিতর্ক আরও চাঙা হয়। সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৬–২ গোলে উড়ে যায় ইরান। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে আবার জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান ইরানের খেলোয়াড়েরা। সেই ম্যাচটি তারা ওয়েলসের বিপক্ষে জেতে ২–১ গোলে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই কিনা, দেখা গেল ইরানের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে আশাপ্রদ চমক নেই। মেহদি তারেমি–সরদার আজমনদের কখনো কখনো অনেক ক্লান্তই মনে হচ্ছিল। এ কারণেই মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণে বল নিয়ে আছড়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। প্রথমার্ধের কথাই ধরুন, যুক্তরাষ্ট্রের গোল লক্ষ্য করে একটি শটও নিতে পারেনি ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমার্ধে ইরানের গোলের উদ্দেশে শট নিয়েছে ৯টি। যার চারটিই লক্ষ্যে ছিল। এর মধ্যে একটি থেকে গোল পেয়েছেন পুলিসিক। অন্যটি জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে গোল পাননি কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমথি উইয়াহ।
দ্বিতীয়ার্ধেও ইরানের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে ম্যাচের শেষ দিকে অবশ্য বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল ইরান। কখনো আক্রমণভাগের ভুলে, কখনো আবার যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার ম্যাট টার্নারের দক্ষতায় গোলবঞ্চিত হয়েছে তারা।