সরকার হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে। এমতাবস্থায় খুব দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রী ও স্কুল শিক্ষার্থীরা পড়েছেন ভীষণ বিপাকে। বাসের জন্য আধঘন্টা, অনেক ক্ষেত্রে ঘন্ট সময় পার করলেও দেখা যাচ্ছে না বাস। একটা-দুইটা যদিও চলছে,সেখানেও উঠতে যাত্রীদের রীতিমত ধাক্কাধাক্কি আর ভীড় দেখা গেছে।
প্রতি চেকে ৫ টাকা বাড়তি দিতে হবে এই শর্ত মানলেই গাড়িতে উঠতে পারছেন যাত্রীরা। অফিস গামী অনেকের সাথেই হচ্ছে বাকবিতণ্ডা। গণপরিবহন এর সাথে জড়িতরা বলছেন ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে গেছে , অর্থাৎ প্রতি ২০ লিটার তেলেই গুনতে হচ্ছে বাড়তি প্রায় ৭০০ টাকা, আমরাও বাধ্য। যাত্রীরাও সেটা বুজছেন , সাথে বলছেন যারা চাকরিজীবী তাদের বেতন তো আর বাড়ছে না , আমরা কোন দিকে যাব।
রাজধানীর সাইনবোর্ড বাস স্টপেজে কথা হয় সেলিম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি সাকাল ৭ টা থেকে সাড়ে পৌণে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন লাব্বাইক কিংবা এম এম লাভলী বাসের জন্য। তার গন্তব্যস্থান রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায়। পরে একটি বাস পেয়ে অনেক ভীড়-ঝামেলা পেরিয়ে উঠতে পেরেছেন।
একটি বেসরকারি কোম্পানির ব্যাবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা ওই যাত্রী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। তবে বাসমালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই দাম বাড়ালে কোনো সমস্যা হতো না। তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বাসমালিক সমিতির নেতারা তাদের বাস অনেক কম রাস্তায় ছেড়েছে। এতে আমরা সাধারণ যাত্রীরা পড়েছি বিপাকে।”
একই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন অনেকেই। এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাসের ভাড়াও বেড়ে গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। সাইনবোর্ড থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা (লাব্বাইক ও এমএম লাভলী বাসের ক্ষেত্রে) হলেও এখন ৪৫-৫০ পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এতে বাসের কন্ট্রাকটর ও যাত্রীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন এক লিটার ডিজেল কিনতে ১১৪ টাকা লাগবে। এক লিটার অকটেনের জন্য গুনতে হবে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম হবে ১৩০ টাকা।
শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের নতুন এই দর জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আজ (শুক্রবার) রাত ১২টার পর থেকে নতুন এই দর কার্যকর হবে।এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। তাতে দাম হয়েছিল ৮০ টাকা লিটার। তার আগে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম ছিল লিটারে ৬৫ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।