সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০৪:০৫ পিএম
২০০০ সালের প্রথম দিনেই রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান ভ্লাদিমির পুতিন। তখন বিল ক্লিন্টন ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার পর যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ বুশ, ওবামা, ট্রাম্পসহ আরো ৩ জন প্রেসিডেন্টের ২০ বছরের মেয়াদ শেষে ক্ষমতায় এসেছেন আরেক প্রেসিডেন্ট।
পুতিনের সমকালীন এই পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ২১ বছরের মেয়াদে একচ্ছত্রভাবে রাশিয়ার ক্ষমতার শীর্ষে পুতিন। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাকী ১৭ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন ৪ মেয়াদে।
ক্ষমতার সঙ্গে পুতিনের সখ্যতা বহু পুরনো। যাত্রা শুরু কেজিবির হাত ধরে। লেলিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এই গ্র্যাজুয়েট ১৯৭৫ সালে যোগ দেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে। ১৯৯১ সালে পদত্যাগ করেন কেজিবি থেকে।
এসময় জড়িয়ে যান রাজনীতিতে। সেন্ট পিটার্সবার্গ নগর প্রশাসনের সচিব হিসিবে কাজ করেন তিনি। কয়েক বছর পর প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাফের ডেপুটি চিফ হিসেবে নিয়োগ পান প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিনের প্রশাসনে। ১৯৯৮ সালে রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বা এফএসবির ডিরেক্টর হন।
এরপর উল্কার বেগে ১৯৯৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী এবং ৩১ ডিসেম্বর হন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। তারপর থেকেই চলছে একক কারিশমা।
কেবল ক্ষমতাপ্রেমী নয় তার খ্যাতি আছে বিভিন্ন প্রাণী প্রেমী হিসেবেও। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় কনি নামে একটি কুকুর ছিল তার। এছাড়াও বুফি, য়ুমে, বার্নি নামে আরো কুকুর ছিল তার। পুতিনের বর্তমান কুকুরটির নাম পাশা।
কেবল কুকুর নয় তার প্রেম রয়েছে মেরু ভাল্লুক, ঘোড়ার প্রতিও। সাইবেরিয়ান ঘোড়ায় চড়ে বুক চিতিয়ে তোলা ছবির সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। পুতিন ভাল্লুকের পিঠে চড়ে ঘুরছেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছিল বছর কয়েক আগে।
সম্প্রতি তার দল রাশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তিনি যে ৫ম বারের তো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বলা হয়, পুতিনের নেতৃত্ব রাশিয়াকে তার হারানো গৌরবের অনেকটাই ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার লৌহযবনিকা যেন আজো বিদ্যমান। দুনিয়ার অন্যান্য আধুনিক শহর যতোটা মানুষের চোখের সমানে আসে, মস্কো কিংবা রাশিয়ার অন্যান্য কোন শহর ততোটা আসেনা। যদিও অনেকেই মস্কোর চোখ ধাঁধানো রূপের কথা এবং ছবি প্রকাশ করেছেন। দেখে উল্লসিত হয়েছেন। তবে এরও বিপরীত চিত্র আছে। অনেকেই বলেন, রাশিয়ায় আজো দারিদ্র্য দূরীভূত হয়নি। এখনো সেখানে স্ট্যালিনের কায়দায় বিরোধীমত দমন করা হয়।
পুতিনকে অনেকে বলেন রাশিয়ার লৌহমানব। তবে পুতিন আদৌ লৌহমানব নাকি রাশিয়ার ভয়ঙ্কর শ্বেতভাল্লুক তা সময়ই বলে দেবে। তবে, পুতিন এখনেএককেজনের কাছে একেকভাবে ধরা দেন। যেমন মার্কিনী এবং পুতিন বিরোধীদের কাছে পুতিন ভয়ঙ্কর শ্বেত ভাল্লুক এবং আমেরিকা বিরোধীদের কাছে যে, পুতিন পরম পূজনীয় লৌহমানব তা বোধহয় না বললেও চলে। যেভাবেই যান না কেন, ব্যক্তি পুতিন এবং রাষ্ট্রনায়ক পুতিন দুইয়ের সংমিশ্রণে পুতিন যে লৌহমানব তা সহজেই আন্দাজ করা যায়।