নাম ফিউচার লাইব্রেরি: বই পড়ার সুযোগ মিলবে ৮৮ বছর পর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১, ২০২২, ০৬:৪৫ পিএম

নাম ফিউচার লাইব্রেরি: বই পড়ার সুযোগ মিলবে ৮৮ বছর পর

ইউরোপের দেশ নরওয়ে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের এই দেশটির রাজধানী অসলোতে এমন একটি লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়েছে- যেখানে সংরক্ষিত বইগুলো বর্তমান সময়ের কোন পাঠকের জন্য নয়, পড়বেন একশ বছর পরের পাঠক! শুনতে অদ্ভূত মনে হলেও এটাই সত্য। এই কারণে লাইব্রেরিটির নামও ‘ফিউচার লাইব্রেরি’ বা ‘ভবিষ্যৎ পাঠাগার’।

দ্য ফিউচার লাইব্রেরি নামের এই লাইব্রেরির বইগুলো প্রকাশ হবে শত বছর পর। শতবছরের এই প্রজেক্টের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম- বর্তমান সময় এবং এই সময়ে মানুষের ধারণা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানো।

 

যদিও উদ্যোক্তারা জানেন, যখন এই লাইব্রেরির বইগুলো পড়ার জন্য উন্মুক্ত হবে, তখন হয়ত কেউই আর বেঁচে থাকবেন না।

 

নরওয়েজিয়ান বন্ধু অ্যান বিট হোভিন্ডকে নিয়ে স্কটিশ শিল্পী কেটি পেটারসান এই লাইব্রেরির উদ্যোক্তা।

অ্যান বিট হোভিন্ড

বন্ধু অ্যান ও পেটারসান এবং পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর একজন লেখককে আমন্ত্রণ জানান; লাইব্রেরির জন্য একটি করে গ্রন্থ লিখতে। ২১১৩ সাল পর্যন্ত লাইব্রেরির জন্য এভাবে বইলেখার কাজ চলবে। প্রজেক্ট শুরুর একশ বছর পর ২১১৩ সালে লাইব্রেরিটি উন্মুক্ত করা হবে। এরও একবছর পর ২১১৪ সালে বইগুলো অসলোর লাইব্রেরির যে গোপন কক্ষের ড্রয়ারে রাখা হবে সেই ড্রয়ারগুলোর তালা খোলা হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই লাইব্রেরির গোপন একটি কর্নারে কাঁচের তৈরি ড্রয়ারের মধ্যে বইগুলো সংরক্ষিত থাকবে। বইগুলো যে জায়গায় রাখা হবে সেই জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে সাইলেন্ট রুম।

 

নরওয়ের রাজধানী অসলোর উত্তরে একটি বনের মধ্যে ফিউচার লাইব্রেরি প্রজেক্টের এ কাজ চলছে। লাইব্রেরির আশপাশের এলাকায় নতুন কিছু পাইন গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। যেগুলো ৩ ফিটের মতো লম্বা।  মার্গারেট অ্যাটউড নামক একজন লেখকের স্ক্রিবলার মুন নামের একটি বই দিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু। এরপর থেকেই লাইব্রেরিতে সমগ্র বিশ্ব থেকে লেখা জমা পড়ছে। লেখকদের মধ্যে ইংলিশ ঔপনাস্যিক ডেভিড মিচেল, আইসল্যান্ডের কবি সাজোন, তুরস্কের এলিফ শাফাক, দক্ষিন কোরিয়ার হান কাং এবং ভিয়েতনামের বংশদ্ভূত আমেরিকান কবি ওশান ভুওং এর লেখা উল্লেখযোগ্য। গত ১২ জুন গহীন বনের মধ্যে এই লাইব্রেরিকে নিয়ে একটি উৎসবে যোগ দেন লেখক, শিল্পীসহ অসলোর প্রায় ২০০ নাগরিক।   

 

 

পেটারসান বলেছেন, এটা একটা অনন্য সুন্দর প্রজেক্ট। এখানে শুধু আমাদের নিয়েই ভাবা হচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতে যে কবিদের জন্ম হবে তাদের নিয়েও ভাবা হচ্ছে। এখানে যারা বই লিখবেন, তাদের অনেকের এখনো জন্মই হয়নি! লাইব্রেরির সৌন্দর্য্য তুলে ধরে পেটারসান বলেন, লাইব্রেরিতে যখন কেউ প্রবেশ করবে, তখন ১০০টি বন্ধ কাচেঁর ড্রয়ার চোখে পড়বে; প্রতিটা ড্রয়ারে একেকটি বই। জায়গাটা জাদুকরী মনে হতে পারে, সিড়ি বেয়ে পাচঁতলায় ওঠার পর পর মনে হতেই পারে; অন্য কোন জগতে প্রবেশ করেছেন। কারণ, এখানে চারিদিক দিয়ে গাছে ঘেরা, এরপর গোপন একটি কক্ষ এবং ড্রয়ারগুলো থেকে আলোকরশ্নি বের হচ্ছে। লাইব্রেরিটি নিয়ে আমার ধারণা; ভবিষ্যতের জন্য কিছু করতে হলে নানা ভাবেই করা যায়, বর্তমান থেকে নিয়েই যে করতে হবে তা নয়। বইগুলো বর্তমানের কেউ পড়তে পারবে না- এই সত্য এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই; তবুও লাইব্রেরির সাইলেন্ট রুমে এসে মানুষজন সময় কাটাচ্ছেন বিষয়টি আনন্দের। ফিউচার লাইব্রেরির এই প্রজেক্টটিকে ‘উৎসর্গ কর্ম’ বা ‘অ্যাক্ট অব সেকরিফাইস’ হিসেবে ধরা যেতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রজেক্টির একজন শুভাকাক্ষী এজন্য যে, এটা শুধু আমাদেরকে বড় পরিসরে চিন্তা করতে শেখায় না, বরং ভবিষ্যতের জন্য আমরা কি রেখে যাচ্ছি- তাও আমাদের ভাবতে সহায়তা করে। একবিংশ শতকে আমরা উষ্ণ বায়ুমন্ডল, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে ভরা সাগরের পানি অথবা মাটির নিচের পারমানবিক বর্জ্য- এমন অনেক ক্ষতিকর বস্তুই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছি। তবে কিছু সুন্দর বিষয়ও আছে- ক্লাসিকাল মিউজিক, বড় বড় ভবন, কারুকার্য্যময় পন্য অথবা সুন্দর সুন্দর সিনেমা। তবে এর সবকিছুই ব্যর্থ হবে যদি শুধুমাত্র আমরাই এগুলো উপভোগ করি।

পেটারসান

মানুষের গত হয়ে যাওয়া সময়ের সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্পর্ক রাখতে এটাই পেটারসানের প্রথম প্রজেক্ট নয়। ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি তার আশপাশের ঘটনাগুলোকে চমৎকারভাবে ফ্রেমবন্দি করেছেন। তার এই আগ্রহই তাকে তার প্রথম প্রজেক্ট ‘ভাটনাজোকুল’ এ অনুপ্রাণিত করে। এই প্রজেক্টে পেটারসান তার কিছু চমৎকার কাজ উপস্থাপন করেছেন। একটি নাম্বার ০৭৭৫৭০০১১২২, যেখানে পৃথিবীর যে কেউ ফোন করে বরফ গলার শব্দ শুনতে পারেন।

পানির নিচ দিয়ে মাইক্রোফোন লাইনের মাধ্যমে আইসল্যান্ডের জোকুলসারলন লেগুনের একটি হিমবাহের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এই সরাসরি ফোন লাইনটি।

 

Link copied!