মোদী সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ ফিরিয়ে দিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৫:৪৫ এএম

মোদী সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ ফিরিয়ে দিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

অপমান-অপদস্ত বোধ করায় ভারতের মোদী সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান ফিরিয়ে দিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সন্ধ্যার কণ্ঠে হতাশা আর অপমানের বেদনা। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবালয়ের উদ্দেশে তিনি হিন্দিতেই তার বক্তব্য জানিয়ে দেন।

দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ফোন এসেছিল বুধবারই। সচরাচর ফোন ধরেন না সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পরে ফোন ধরলে ওই ফোনে হিন্দিতে তাকে জানালো হয়, তাকে সরকারের তরফে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হবে। তিনি কি এই সম্মান নেবেন? তখন তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি ওই পুরুষ্কার নিচ্ছেন না। 

পরে আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন ধরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে! নব্বই বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাব আমি? শিল্পীদের কোনও সম্মান নেই আর।’’

 

Padmashree

সন্ধ্যার কণ্ঠে স্পষ্ট হতাশা আর অপমানের সুর। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবালয়ের উদ্দেশে তিনি হিন্দিতেই তার বক্তব্য জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনও দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব।’’ আচমকা এই পদ্মশ্রী খেতাবের ফোনে তিনি যে অপমানিত বোধ করেছেন, তাঁর কণ্ঠই তা জানিয়ে দিচ্ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে আধুনিক বাংলা গানে তার সুরের বিস্তার আর যাই হোক পদ্মশ্রীর আশা যে করে না তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন এই নিরহঙ্কারী শিল্পী।

১৯৭১ সালে 'জয় জয়ন্তী' এবং 'নিশিপদ্ম' ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা। এ ছাড়া ২০১১ সালে রাজ্য সরকার তাকে 'বঙ্গবিভূষণ' উপাধিতে সম্মানিত করে।

সন্ধ্যা কথা বলেছেন স্থানীয় জি ২৪ ঘণ্টার সাথেও। তিনি বলেন, ‘আমার শরীরটা বেশ খারাপ। আমাকে পদ্মশ্রী নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফোন করা হয়েছে। আমি বলেছি না আমি পারবনা এই সম্মান নিতে যেতে। তারা কারণ জানতে চায়, আমি বলেছি আমার মন চাইছে না। এটা অনেক বড় অপমান আমার জন্য। এই অপমানের সম্মান আমি গ্রহণ করতে পারব না। আমি কি কাজ করেছি ওঁরা তা জানে না। আমায় চেনেও না। সঙ্গীত জগতে সম্পর্কেও ওরা অবগত নয়। তাই কিছু না জেনেই কথা বলেছে, সেটাই খারাপ লাগা। একেবারে ঘোষণার শেষ পর্যায়ে এসে আমায় ফোন করছে, এতদিন পর মনে হল ওঁদের, আমি ঠিকমত দাঁড়াতে পারি না এখন, মঞ্চে গিয়ে কীভাবে গ্রহণ করব এই সম্মান? ’

-মুখোপাধ্যায়ের-দশটি-কালজয়ী-গান

‘সারা ভারতে যত শিল্পী আছেন তাদের সঙ্গে আমি গান গেয়েছি। বড়ে গুলাম আলি খানের শিষ্যা আমি, তার সঙ্গেও এক স্টেজে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সেটাই আমার জীবনের সেরা পুরস্কার। আমার দেশ আমায় যতটা ভালবেসেছে, মানুষ আমায় যতটা নিজের করে নিয়েছে, তারপর আমার আর কোনও আক্ষেপ নেই। এর আগে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়ও এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এজন্যই।’

Link copied!