ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশের মানুষের কাছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নাম। পুরো নাম বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছো মুজিব। ডাক নাম রেনু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী। আমৃত্যু থেকেছেন বঙ্গবন্ধুর পাশে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, তেমনি বঙ্গবন্ধু ও তার রেনু পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। আজ ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রিয়তমা স্ত্রীর ৯১তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলার এই মহিয়সী নারী। বাবা-মা হারা রেনু বঙ্গবন্ধুর বাবা-মার হাতেই বড় হয়েছেন। মাত্র তিন বছর বয়সেই হয়েছেন ১৩ বছর বয়সী খোকা নামে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী।
বঙ্গবন্ধু তার জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন জনগণের সেবায়। বেশির ভাগ সময় বঙ্গবন্ধুকে কাটাতে হয়েছে জেলে। আর সেই সময়গুলোতে কাণ্ডারির মতো হাল ধরেছিলেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। পর্দার আড়ালে থেকে বঙ্গবন্ধুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছেন।
সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময় দলের নেতাকর্মীরা দিক নির্দেশনার ছুটে আসতেন তার কাছে। বঙ্গমাতা জেলে দেখা করে বঙ্গবন্ধুকে দলের নেতাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতেন। আর বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনা পৌছে দিতেন দলের নেতাদের কাছে। সংগঠন চালানোর প্রয়োজনীয় অর্থ তাকেই যোগাড় করতে হতো।
১৯৬৬ সালের ঘটনা।বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে রাজপথেও নামেন বঙ্গমাতা। এাসময় নিজের অলংকার বিক্রি করে তিনি সংগঠনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে অনেকেই প্যারোলে মুক্তির কথা বলেছিলেন। ওইসময় বঙ্গমাতাকে বোঝানো হয়েছিল পাকিস্তানিদের শর্ত না মানলে তাকে বিধবা হতে হবে। তারপরও বঙ্গমাতার পরামর্শেই বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরে গণঅভ্যুত্থানের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের নেপথ্যেও ছিলেন বঙ্গমাতা। ওইদিন একশো চার ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ভাষণের বিষয়বস্তু ঠিক করতে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও ভাষণের বিষয়বস্তু ঠিক করতে বিফল হলে বঙ্গমাতা বলেছিলেন-তোমার মন যা চায়, তুমি তাই বলবে।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আন্দোলনের উত্তাল দিনে আশাহত নেতাকর্মীরা তার মাঝে খুঁজে পেতেন আশার আলো। বঙ্গমাতার আশাজাগানিয়া বক্তব্যেই নেতাকর্মীরা পেয়ে যেতেন আন্দোলনের প্রয়োজনীয় জ্বালানি।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু চিরকাল ইতিহাসের পাতায় অম্লান থাকবে, তেমনি বাঙালি জাতি চিরকাল স্মরণ করবে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী ‘বঙ্গমাতা’ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে।
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠন। এ উপলক্ষ্যে দলটি সকাল ৯টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ‘বাঙালির মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটি। এসময় ১০০০ জন করোনাযোদ্ধা চিসিৎসকদের মাঝে বিশেষ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রয়েছে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান’ অনুষ্ঠান। এতে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করবেন।
এছাড়া ৯ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের আয়োজনে ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা।