বাবার সঙ্গে টাকা চুরির মামলা করতে গিয়ে মেয়ে গ্রেপ্তার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৯:৪৬ এএম

বাবার সঙ্গে টাকা চুরির মামলা করতে গিয়ে মেয়ে গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

দেড় কোটিরও বেশি টাকা চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মোহাম্মদপুরের বাসায় মামলা করেছিলেন ব্যবসায়ী। এরই ঠিক চারদিনের মাথায় থানা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই ব্যবসায়ীর টাকা আসলে চুরি করেছেন তারই একমাত্র মেয়ে। এরই মধ্যে মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের পেশাগত পরিচয় ঠিকাদার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া মেয়ে মিনা হামিদ জানান, বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়ে ভালোবেসে বিয়ে করা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছেন। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ গত ৮ জুলাই স্বামী সাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে চুরির ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথমে আলোকে বলেন, ‍“ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের বাসার দরজা কিংবা সিন্দুকের তালা ভাঙা হয়নি, অথচ সিন্দুক থেকে টাকা চুরি হয়েছে। প্রথমেই আমরা ধরে নিই, বাসার কেউ এই টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত। তদন্ত করে জানা গেল, হামিদের মেয়ে মিনাই টাকা চুরি করেছেন। তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলে তিনি টাকা নিয়েছেন।”

ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ ওরফে বাবুল স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থাকেন। ঈদুল আজহার দুই দিন আগে ভোলায় সপরিবারেগ্রামের বাড়ি যান তিনি। ঈদ উদযাপন শেষে গত ২০ জুন ঢাকার বাসায় ফেরেন তিনি। ঢাকায় ফেরার ১১ দিনের ব্যবধানে বাসায় টাকা রাখার সিন্দুক খুলে তিনি আবিষ্কার করেন, তার ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা গায়েব।

টাকা চুরির বিষয়টি বাসায় প্রাথমিকভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউই তখন স্বীকার করেননি। পরবর্তীতে গত ৪ জুলাই আবদুল হামিদ তার মেয়ে মিনাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে চুরির মামলা করেন। এরপর মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের বাসায় যান। সিন্দুক না ভেঙে টাকা চুরির সঙ্গে ঘরের লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করতে থাকেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বাসায় বসবাসকারী সবাইকে কৌশলে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাসার সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদকে তাদের সন্দেহ হয়। টানা চারদিন বাসায় গিয়ে পুলিশ নানা কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে মিনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, সিন্দুকের তালা খুলে তিনিই টাকা চুরি করেছেন। সেই টাকা তিনি স্বামী সাকিবুল হাসানের কাছে দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “মিনা হামিদ বার-অ্যাট ল’ পড়ছেন। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত বছর রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস সাকিবুলকে বিয়ে করেন। স্ত্রী মিনার দেওয়া ৯০ লাখ টাকা নিয়ে সাকিবুল মোটরসাইকেলে করে গ্রামের বাড়িতে টাকা রেখে আসার জন্য সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়ি যান।”

পুলিশকে ১৬৪ ধারায় দেওয়া প্রাথমিক জবানবন্দিতে মিনা বলেন, “আমাদের এই বিয়ে পরিবার মেনে নেবে না। তাই আমি বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়েছি। উদ্দেশ্য ছিল, বাসা থেকে কাউকে না বলে সাকিবুলের সঙ্গে সংসার শুরু করবো।”

এদিকে টাকা চুরির বিষয়ে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে কিছু বলতে রাজি হননি মামলার বাদী আবদুল হামিদ।

Link copied!