জুন ৫, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে শত শত দরিদ্র ভারতীয় নাগরিককে বেআইনিভাবে আটক করে বাংলাদেশে পুশ ইন (জোরপূর্বক সীমান্তের ওপারে পাঠানো) করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাইভিত্তিক নাগরিক অধিকার সংস্থা ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি)’।
সংস্থাটির দাবি, ২৩ মে থেকে আসামের ৩৩টি জেলায় একযোগে অভিযান চালিয়ে পুলিশ প্রায় ৩০০ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করে। এর মধ্যে অন্তত ১৪৫ জনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ ঠেলে দেওয়া হয়।
সিজেপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশই শ্রমজীবী এবং দরিদ্র। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশি ট্রাইব্যুনালের আদেশে জামিনে মুক্ত ছিলেন বা এখনো নাগরিকত্ব প্রমাণে আদালতে লড়ছেন।
কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাসন আদেশ বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছাড়াই তাঁদের সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। এতে সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বরপেটা জেলার হাজেরা খাতুন নামের ষাটোর্ধ্ব এক নারী জানান, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং তাঁর মামলা গৌহাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ২৫ মে আটক করে বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে তাঁকে বাংলাদেশি মুদ্রা দিয়ে সীমান্তে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারা রাত বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁকে ও অন্যদের।
বিজিবি জিজ্ঞাসাবাদ করলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এরপর কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়াই হাজেরা ও তাঁর সঙ্গীরা হেঁটে ভারতে ফিরে আসেন।
সিজেপি আরও জানায়, বাকি পাঁচ নারী—সোনা বানু, রহিমা বেগম, জাহানারা বেগম, আসিফা বেগম ও সাহেরা খাতুনের অভিজ্ঞতাও ছিল একই রকম। কেউ মাঠে, কেউ ধানক্ষেতে রাত কাটিয়েছেন। অনেক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ও সমাজকর্মীরা জানাচ্ছেন, আসামে বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ জানেন না, কখন তাঁকে ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।
আগামী বছর রাজ্য নির্বাচনের আগে এই ধরনের পুশ ইন অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।