জাবি নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্যের অভিযোগে বিতর্কিত বক্তা আমির হামজাকে উকিল নোটিস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম

জাবি নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্যের অভিযোগে বিতর্কিত বক্তা আমির হামজাকে উকিল নোটিস

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) নিয়ে ‘সম্মানহানিকর, ‘কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা’ মন্তব্যের অভিযোগ তুলে বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তা আমির হামজাকে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সিনেট সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খানের পাঠানো এই নোটিসে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘জনসম্মুখে প্রকাশ্যে’ ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।

এদিন ডাকযোগে নোটিসটি আমির হামজার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে শিহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন।

তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর কুষ্টিয়া শাখার নেতা মুফতি আমির হামজাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

আমির হামজা আওয়ামী আমল থেকেই নানান সময়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জামায়াত ঘনিষ্ঠ থাকার কথা বলা হলে তখন তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থন করে বলে বক্তব্য প্রচার হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিতর্কিত বক্তা আমির হামজাকে ২০২১ সালের মে মাসে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওয়াজের নামে তরুণদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একে একে প্রকাশ্যে রাজনীতির ময়দানে আসতে শুরু করলে তাদের সঙ্গে আমির হামজাও সামনে আসেন। জামায়াতের কর্মসূচিতে তিনি অতিথিও হন।

তার কোনো সাংগঠনিক পরিচয় আছে কিনা, তা প্রকাশ না করা হলেও তাকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তারে এমন প্রচারের ভিডিও সামনে আসে। সংবাদ মাধ্যমেও সেসব উঠে আসে।

এর মধ্যে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেলে বড় জয় পেলে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বিগত সময়ে কেমন ছিল তা নিয়ে আমির হামজার বক্তব্য সামনে আসে।

নোটিসে বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের খবর ও ইউটিউব ভিডিওর বরাতে নোটিসে বলা হয়েছে, “মুফতি আমির হামজা নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে (শিক্ষার্থীদের) ‘মদ’ দিয়ে কুলি করতে দেখেছেন এবং ছাত্ররা শিক্ষকদের লাঠি দিয়েছে পেটায়।”

তার এসব বক্তব্যকে ‘মিথ্যা, অবমাননাকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে নোটিসে বলা হয়েছে, আমির হামজার এ ধরনের মন্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়েছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ‘বিরূপ’ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এবং সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবেও আইনজীবী শিহাবের অনুভূতিতে ‘আঘাত’ লেগেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ বক্তব্য নাকচ করে ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিলেও আমির হামজা কোনো প্রতিবাদ জানাননি তুলে ধরে নোটিসে বলা হয়েছে, এতে তার বক্তব্য যে ‘অসত্য ও মানহানিকর’ তা প্রমাণিত হয়।

আইনি নোটিসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এর বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) মিথ্যা বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও দ্রুত ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ফৌজদারি মামলা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে দেওয়ানি মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নোটিসে।

এর আগে আমির হামজার বক্তব্যের ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের বিবৃতিতে আমির হামজার দাবিকে অসত্য আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ চালু হয় এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে এই বিভাগে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সুতরাং তিনি জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হওয়ার যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তা সত্য নয়।

এছাড়া আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছে তা আমির হামজার ‘মনগড়া ও সত্যের অপলাপ মাত্র’।

Link copied!