রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি আবার খুলে দেওয়া হলো দর্শনার্থীদের জন্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৩, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম

রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি আবার খুলে দেওয়া হলো দর্শনার্থীদের জন্য

ছবি: সংগৃহীত

ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার দুইদিন পর আবারও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ১৩ জুন সকালে জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কাছারিবাড়ি খুলে দেওয়া হয়।

এর আগে ১১ জুন কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ অনিদির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

কাছারিবাড়ি দর্শনার্থীদের খুলে দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর কোন পরিকল্পিত ঘটনা ছিল না। কোন মৌলবাদ বা কোন রাজনৈতিক দলের কারণে এ ঘটনা ঘটেনি। এটি ছিল একটি অনাকাঙখিত ঘটনা। আবারও কাছারিবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।

“আমরা বিশ্বাস করি, সকলের সহযোগিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।”

এদিকে অডিটোরিয়ামে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা বিএনপির এক নেতাসহ আরও ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আটজনে দাঁড়াল।

গ্রেপ্তাররা হলেন-সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহজাদপুর পৌর এলাকা রূপপুর এলাকার বাসিন্দা আবু শামিম (৬০), রূপপুর নতুনপাড়ার শাহ আলমের দুই ছেলে রিমন হোসেন (২৫), সজিব হোসেন (২২), পাঠানপাড়ার শুকুর মাহমুদের ছেলে আশিকুর রহমান আরমান (২১), একই এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে তানভীর হাসান অর্ক (২২) ও চুনিয়াখালিপাড়ার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছেলে জুবায়ের হোসেন (২৪)।

শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতভর সেনাবাহিনীর অভিযানে তিনজন এবং পুলিশের অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

“এর আগে ১২ জুন আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ নিয়ে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

দর্শনার্থীদের খুলে দেওয়ার পরই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধি দল কাছারিবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন।

এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযানে কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তাতে জানানো হয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন বলেন, “হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত কোন নিদর্শন নষ্ট হয়নি। কবিগুরুর সম্মান বা মর্যাদাহানিকর কিছু ঘটেনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।”

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। দ্রুতই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন হিরু, উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী শওকত উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। ইতোমধ্যে হামলা ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হচ্ছে।”

গত ৮ জুন একজন দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখানে মোটার সাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ওই দর্শনার্থীকে অফিস কক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ১০ জুন উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়। এরপর কাছারিবাড়ির পাশ দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় একদল উত্তেজিত জনতা অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালায় এবং স্টাফদের মারধর করেন।

এরপর ১১ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ওইদিন দুপুরে মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই দিনে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করেন।

মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

Link copied!