জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে একই মঞ্চে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত (ওয়ারেন্ট) আসামী ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলকে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদালতের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ই কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল। এছাড়াও বিশেষ অথিতি ছিলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ।
গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দারের আদালত চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এবিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহফুজুল হক ভুইয়া বলেন, আমরা আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ইভ্যালির রাসেল বলেন, শুধু ইভ্যালির বিরুদ্ধেই ভোক্তাদের সাড়ে ৬ হাজার অভিযোগ জমা পরেছে। এই অভিযোগগুলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আমলে না নিয়ে মহাপরিচালক মহোদয় তা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ভোক্তার মহাপরিচালক আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে যে সৎ সাহস দেখিয়েছেন আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
যদি সকলে আমার পাশে থাকে এবং আমাকে কোন চাপ সৃষ্টি না করে তাহলে আমি সবার টাকাই ফেরত দিতে পারবো।
ই-ক্যাবের সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহেদ তামাল বলেন, অনেকেই প্রস্তাব করেন ই কমার্সের আইন করার জন্য। এবিষয়ে অনেকগুলো আইন রয়েছে। ভোক্তা অধিকারে যেই পরিমান অভিযোগ পরে তা যদি অটোমেটেড সমাধান করা হয় তাহলে অভিযোগের মাত্রা কমে আসবে।
তিনি বলেন, ই-কমার্স নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষের মহাপরিচালক কয়েক বছর ধরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভুমিকা পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ই-কমার্স খাত বাংলাদেশে একটি নতুন খ্যাত। বাংলাদেশের সরকারের লক্ষই হচ্ছে স্মার্ট দেশ গড়া, সেই ক্ষেত্রে ই কমার্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে ই-কমার্সের অনেক কার্যক্রমে জনগনের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। সেই ভোগান্তি যেন আর না হয় সেই জন্য সরকার কাজ করছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যখন আমরা ই-কমার্স নিয়ে কাজ করতে থাকি তখন অলরেডি রাসেল সাহেব এরেস্ট, এমন অনেকেই এরেস্ট হলো।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। তাদের ব্যাংকের টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। এমন সময় আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল যখন ই-কমার্সের করুণ অবস্থা।
তিনি বলেন, আমাদের নেক্সট বিজনেস কিন্তু ই-কমার্স বিজনেস। আমাদের এই বিজনেসটাকে ধরে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন তাতে ই-কমার্স বিজনেসকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। রাসেল সাহেবকে নিয়ে আমাকে জড়িয়েও নিউজ করা হয়েছে। এধরনের হলুদ সাংবাদিকতা করলে আবারো এই ই-কমার্স ব্যবসায় ধস নামবে।
তিনি বলেন, ঢাকা টাইমসকে যে নিউজ হয়েছে সেটা একটি ভুল নিউজ হয়েছে।
আমি ঢাকা টাইমসের সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের নোটিস করেছি।
তিনি বলেন, ইভ্যালির রাসেল সাহেব এখন পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে। তিনিতো পালিয়ে যায়নি। আমি চেয়েছি তারা বিজনেসে ফিরে আসুক, তারা যদি বিজনেসে ফিরে আসে তাহলেই কিন্তু ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব।
গ্রেফতারি ওয়ারেন্টভুক্ত রাসেলের সঙ্গে ডিজির একই অনুষ্ঠানে থাকার বিষয়টি সাধারন মানুষ কেমন চোখে দেখবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে অতিথি হিসেবে এসেছি, আমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজক নই। এখানে কারা উপস্থিত আছেন তাদের বিষয় আমি অবগত নই। কেউ আসামী কিনা, কেই গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত কিনা তা আমি জেনে এখানে আসিনি।
প্রসঙ্গত ২০২১ সালের ১৩ মার্চ তানভীর হোসেন নামের একজন ক্রেতা বিজ্ঞাপন দেখে ৪৫ দিনের মধ্যে ইভ্যালির পণ্য সরবরাহের শর্তে একটি মোটরসাইকেল কেনা বাবদ দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। নির্দিষ্ট সময়ে পন্যটি ইভ্যালি না দিয়ে ৬মাস পর ১৩ সেপ্টেম্বর ইভ্যালি পণ্যের সমমূল্যের একটা চেক প্রদান করেন।
চেকটি নগদায়নের জন্য একাধিক ব্যাংকে জমা দিলে তা ডিজঅনার হয়।
এ বিষয়ে ইভ্যালি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় শামীমা নাসরিন ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় বর্তমানে পলাতক আসামী ইভ্যালির রাসেল প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ইভ্যালির চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিভিন্ন অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন। তবে কিন্তু মাসের পর মাস এবং বছর পেতিয়ে গেলেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি। ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি রাসেল।
এ বিষয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন প্রতারনার মামলা হয়।
গ্রাহকদের নানা প্রলোভনে প্রায় ৫শ কোটি টাকার বেশি পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ইভ্যালি।