ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে টিউলিপের চিঠি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৮, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে টিউলিপের চিঠি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ এমপি শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক।

যুক্তরাজ্যে . ইউনূসের সফরের সময় এই সাক্ষাৎ চান টিউলিপ, যাতে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্ভূতভুল বোঝাবুঝিনিরসন করা যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে তথ্য জানা গেছে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ . ইউনূস লন্ডন সফরকালে রাজা চার্লস এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে চান টিউলিপ।

ব্যক্তিগত রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ

চিঠিতে টিউলিপ লেখেন, "বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার খালাএই পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে আমাকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনার সঙ্গে একটি সরাসরি কথোপকথন বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়ক হবে।"

তিনি নিজের পরিচয় তুলে ধরে লিখেছেন, "আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক, লন্ডনে জন্ম আমার। গত এক দশক ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হ্যাম্পস্টেড হাইগেট এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছি। বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের কাছের দেশ, কিন্তু সেখানে আমার কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। আমি সে দেশে জন্মাইনি, থাকি না, পেশাগত জীবনও সেখানে নয়।"

টিউলিপ অভিযোগ করেন, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অবস্থান পরিষ্কার করতে চাইলেও তারা তাঁর লন্ডনভিত্তিক আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি এবং বরং ঢাকার একটি ঠিকানায় এলোমেলোভাবে চিঠি পাঠিয়েছে।

গুজব-নির্ভর তদন্ত মিডিয়া লিক

টিউলিপ বলেন, "এই তদন্ত পুরোপুরি কাল্পনিক। প্রতিটি ধাপ যেন পরিকল্পিতভাবে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে, অথচ আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি।"

তিনি আরও বলেন, "আমি জানি, আপনি বুঝতে পারবেনএই অভিযোগ যেন আমার নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বা দেশের প্রতি কর্তব্যে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি।"

টিউলিপ দাবি করেন, "আমি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা অভিযানের শিকার হয়েছি, যা আমার খালার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা চালাচ্ছে।"

অভিযোগ, প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাব

যুক্তরাজ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি সিটি মিনিস্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন টিউলিপ। অভিযোগ, তিনি তাঁর মা শেখ রেহানা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ,২০০ বর্গফুট জমি দখলে নিয়েছেন। যদিও টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর আইনজীবীরা অভিযোগগুলোকেভিত্তিহীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতবলে আখ্যায়িত করেছেন।

অভিযোগের সূত্রপাত এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের করা একটি মামলায়। তাঁর অভিযোগ, শেখ হাসিনার পরিবার রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে টিউলিপ জানান, তিনি এমন কোনো পরোয়ানা বা আদালতের সমন সম্পর্কে অবগত নন।

যেহেতু যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ বিক্যাটাগরির প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতাভুক্ত, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে বাংলাদেশ থেকে সুস্পষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পেশ করতে হয়যা মন্ত্রী বা বিচারক পর্যায়ে যাচাই করা হয়।

যুক্তরাজ্যে তদন্তে অব্যাহতি

বিদেশে সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগ উঠলে টিউলিপ নিজেই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার আচরণবিধি তদারক কর্মকর্তার কাছে যান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত শেষে জানান, টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মেলেনি।

তবে তিনি মত দেন, বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় ভাবমূর্তি নিয়ে টিউলিপের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।

তদন্তে আরও একটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির সময় টিউলিপের উপস্থিতি। নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল। তবে টিউলিপ জানান, তিনি তখন পর্যটক হিসেবে মস্কোতে ছিলেন এবং এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে করে তদন্তকারী তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

তবুও টিউলিপ নিজ ইচ্ছায় তাঁর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর ভাষায়, এসব বিতর্ক প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারের জন্যবিভ্রান্তিসৃষ্টি করছিল।

Link copied!