বিলের পুরো টাকা না পাওয়ায় রাজধানীর শ্যামলীর বেসরকারি একটি হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ যমজ শিশুকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন শিশুদের মা। ওই হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে যমজ শিশুর একজন মারা গেছে। বেঁচে থাকা শিশুটিও গুরুতর অসুস্থ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব খুদে বার্তায় জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ওই মা নিজের ইচ্ছায় সন্তানদের নিয়ে যান। তিনি হাসপাতালের পুরো বিলও পরিশোধ করেননি।
এ ঘটনায় শিশুদের মা আয়েশা বেগম আজ শুক্রবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলায় করেছেন। মামলায় হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ার ও পরিচালক সোয়েব খানকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে দুপুরে র্যাব অভিযান চালিয়ে হাসপাতালের সব নথি জব্দ করে ও এক সেবিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়।
আয়েশা বেগম জানান, তিনি তার ছয় মাস বয়সী যমজ সন্তান নিয়ে সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনিতে থাকেন। শিশুদের বাবা জামাল সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন।
এই মায়ের ভাষ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর তার যমজ সন্তানদের ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়। অসুখ বেড়ে যাওয়ায় তিনি সন্তানদের রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। গত রবিবার ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা শিশুদের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই হাসপাতালের এনআইসিইউতে শয্যা খালি ছিল না।
এই দুই শিশু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসক নাজমা বেগমের ইউনিটে ভর্তি ছিল। এই ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ইদ্রিস উল সিদ্দিকী নথিপত্র দেখে জানান, শিশু দুটির জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। শ্বাসকষ্ট বেশি থাকায় মুখে খাবার দেওয়া যাচ্ছিল না। অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। হৃৎস্পন্দন বেশি ছিল। এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের এনআইসিউ অনেক সময় প্রয়োজন হয়। এখানে এই সুবিধা নেই। পরে শিশু দুটির মা বন্ডে সই করে নিজ দায়িত্বে সন্তানদের নিয়ে যায়।
আয়েশা বেগম বলেন, সে সময় দুই ‘দালাল’ এসে শ্যামলীর বেসরকারি আমার বাংলাদেশ হসপিটালে কম খরচে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি সন্তানদের নিয়ে তাদের সঙ্গে ওই হাসপাতালে যান। পাঁচ দিন চিকিৎসার পরে গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিল চান। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহু কষ্টে জোগাড় করা ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকেলে তাদের ‘দালাল শাহিনকে’ দিয়ে মুমূর্ষু দুই শিশুসহ মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই যমজ শিশুদের একজন আহমেদ মারা যায়। আরেক শিশু আবদুল্লাহকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তার অবস্থাও ভালো নয়। মৃত সন্তানের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
আয়েশা বেগমের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আজ শুক্রবার দুপুরে আমার বাংলাদেশ হসপিটালে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক আতাউল্লাহ আল নোমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই মা তার জ্বরে আক্রান্ত তার দুই সন্তানকে নিয়ে আসে। তাদের এনআইসিইউতে রাখা হয়। শিশুদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে বললেও তিনি করাননি। বরং নিজেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যেতে চান। এ কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের অভ্যর্থনাকারী সাজিয়া আফরোজা বলেন, বিলের কাগজ সব র্যাব নিয়ে গেছে। ওই নারী হাসপাতালে ৪ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুদের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহিন নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।