পশুর হাটে বড় গরু যেন বিক্রেতাদের গলার কাঁটা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৯, ২০২২, ০৪:৪৪ পিএম

পশুর হাটে বড় গরু যেন বিক্রেতাদের গলার কাঁটা

রবিবার দেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আজহা। এই ঈদ উপলক্ষে আজ রাতই হচ্ছে কোরবানির পশু বেচাকেনার শেষ সময়। এ কারনে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে গরু-ছাগল কিনতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে বড় গরু নিয়ে বেশি  বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারা। চাহিদা না থাকায় এই গরুগুলো এখন বিক্রেতাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর গাবতলী, আফতাবনগর, শনির আখড়াসহ বেশ কয়েকটি কোরবানির পশুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেদারছে চলছে পশু বেচাকেনা। মাঝারি আকারের  গরুর প্রতি ক্রেতাদের বেশি চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। বড় আকারের গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। আর ক্রেতা থাকলেও তারা যে মূল্য হাঁকান, সেমূল্যে বিক্রি করলে অনেক লোকসান গুনতে হয় বিক্রেতাদের। এমতাবস্থায় অনেক বিক্রেতা হাট থেকে পশু বাড়ি ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তে আছেন। 

রাজধানীর আফতাব নগর হাটে কথা হয়  কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার মো. সওদাগর মিয়া নামে এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি ১৬ মণ ওজনের দুটি  গরু নিয়ে ৪ দিন ধরে রয়েছেন এই হাটে। গরুর হাটে তার সঙ্গে আরও এসেছেন আরও ৮জন। ঈদের আগের দিনও পাচ্ছেন না গরুর খরচের মূল্য। তাই বাধ্য হয়ে গরু ফেরত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে মো. সওদাগর মিয়া বলেন, ”ক্রেতারা গরুর যে দাম বলছে সেই দামে আমার খরচই  ওঠে না। তাহলে আর গরু রেখে কি করবো। এর চেয়ে গরু বাড়ি নিয়ে যাওয়াই ভালো।”

কত দামে গরু ছাড়বেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চাইছিলাম ৭-৮ লাখ টাকা হলে গরু দুইটা বিক্রি করে দিবো। কিন্তু তাও হইতেছে না। যে দাম দেশে বলছে তার চার ভাগের এক ভাগও ক্রেতারা বলেন না। এখন দেশের গরু দেশেই নিয়ে যাবো। সব সময় দেশেই গরু বিক্রি করতাম। এবার মনে হলো ঢাকায় গরু বিক্রি করি। সবাই কয় ঢাকায় বলে বেশি দামে গরু বিক্রি করা যায়।”

গরু নিয়ে গেলে আবার লালন-পালনের ব্যয় বাড়বে কিনা জানতে চাইলে সওদাগর মিয়া বলেন, ”ব্যয় বাড়লে কি করমু। গরু কি ফালাই দিমু। জানে খাটছি, গরু পালছি। এখনও পালতে হইবো। গরু তো ফালাইয়া দেয়া যাইবো না। ”

সওদাগর মিয়ার মতো একই অবস্থা ঝিনাইদহের সুরুজ আলীর। ২৫ মণ ওজনের ‘কালো পাহাড়’ নামে একটি গরু আনেন আফতাব নগর হাটে। দাম হাঁকান ১০ লাখ টাকা। প্রথম দিকে ৪-৫ লাখ টাকা দাম উঠলেও এখন তাও উঠতেছে না বলে জানান সুরুজ আলী।

তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ”৪দিন ধরে এখানে আছি। গরুর বিক্রিরতো সেই রকম পার্টি পাচ্ছি না। পেলে তো বিক্রি করে যেতাম। এখন তো নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। ক্রেতারা ৪-৫ লাখ টাকা বলছিলো আগে। কিন্তু এতে এর খরচও উঠে না। তবে এখন আর কি করার এই দাম পেলেও বিক্রি করে দিবো।”

রাজধানীর বেশিরভাগ হাটেই বিক্রি হচ্ছে না বড় গরু। মাঝারি ও ছোট গরুর দিকে এবার চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। তাই প্রথম দিকে বেশি দাম হাঁকালেও বাধ্য হয়েই অল্প দামে গরু ছাড়ছেন ক্রেতারা। তেমনই একজন চুয়াডাঙ্গার জালাল মিয়া। ৩০ মণ ওজনের ‘সম্রাট’ (গরুর নাম) নিয়ে এসেছেন গাবতলী পশুর হাটে। দাম হাঁকিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। ন্যায্য দাম না পাওয়ায়  ৪ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি।

জালাল মিয়া দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ”গরুর পেছনে প্রচুর খরচ হয়। এখন যদি ফেরত নিয়ে যাই তবে এই গরু পালন করতে পারবো না। তাই এই দামেই বিক্রি করে দিলাম। কিছু টাকাতো বাড়ি লইয়া যাইতে পারতাছি।”

রাজধানী আফতাব নগর ও গাবতলী হাট ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। করোনার ফলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে অনেক মানুষ। যার ফলে মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদাই অনেক বেশি। অন্যদিকে, বড় গরু নিয়ে আসা বিক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে ক্ষতির মুখে। কেউ অল্প দামেই ছাড়ছেন গরু, আবার কেউ বাড়ি ফেরত নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Link copied!