পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার সুযোগ অসাংবিধানিক: টিআইবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১১, ২০২২, ১০:২৭ এএম

পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার সুযোগ অসাংবিধানিক: টিআইবি

কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগকে অনৈতিক, সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক এবং বিদ্যমান আইনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্রান্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে এই সুযোগটি বাতিল করারও আহ্বান জানিয়েছে এই সংস্থাটি।

গতকাল শুক্রবার গনমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এসব তথ্য জানায়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ এবং রাশিয়ার-ইউক্রেন আগ্রাসন সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা, সরকারি ব্যয়ে সংকুলান এবং বেসরকারি খাতকে চাঙা করার যুক্তিতে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের অভূতপূর্ব অনৈতিক এক প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যা সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, সংশ্লিষ্ট আইনের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক এবং অর্থপাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার নামান্তর। এই ন্যাক্কারজনক প্রস্তাব বাতিলের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থমন্ত্রী যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন, নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার প্রদান। অথচ অর্থপাচার রোধ আইন ২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ, দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড নির্ধারিত রয়েছে। এই সুযোগ অর্থপাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, যা সংবিধান পরিপন্থী এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননাকর।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বরেন,  যারা বৈধ উপার্জননির্ভর করদাতা তাদের জন্য এই প্রস্তাব প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক, কারণ তারা ৭ শতাংশের কমপক্ষে তিনগুণ হারে কর দিয়ে থাকেন। এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী। অবিলম্বে এ সুযোগ বাতিল করতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য যে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারিত রয়েছে তা অনুসরণ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।  

পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতোই কালো টাকা সাদা করার বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র, মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এতে বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙ্খিত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ, যারা অর্থ পাচার করেছেন তারা এ ধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এ রকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই। বিশেষ করে, যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ব্যতিরেকে এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। বরং, এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরো বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এই অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতি পথ থেকে সরে আসার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।  

Link copied!