এপ্রিল ৫, ২০২৩, ০৭:০৯ পিএম
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে হাজারো দোকান। এতে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকেও ব্যবসায়ীদের আর্থিক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে নগর ভবনের মেয়র দপ্তরে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটগুলোর নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ব্যারিস্টার শেখ তাপস তদন্ত কমিটির সাথে সমন্বয় করে আসছে শনিবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করার কথা বলেন।
ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, "এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যাপ্ত অনুদান দেবেন। পাশাপাশি, আমরাও আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনুদান দেবো। সেজন্য আমরা যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আপনারা তাদের সাথে সমন্বয় করে আগামী শনিবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করুন। আমরা আপনাদের পাশেই আছি।"
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে অনুদানের আওতায় আসে তার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, "তালিকা প্রণয়নে যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর বাইরে অন্য কারো নাম না আসে সেজন্য আপনারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করুন। আমাদের কমিটিকে সহায়তা করুন। তালিকায় দোকানের প্রকৃত মালিক, মালিকের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংযুক্ত করবেন। আর দোকান যদি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে মালিকের পাশাপাশি ভাড়াটিয়ার নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংযুক্ত করবেন।"
এ সময় নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট হতে সাটার, পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের দামি উপকরণ লুটপাট হচ্ছে জানিয়ে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানান। জবাবে ঢাদসিক মেয়র করপোরেশনে দায়িত্বরত আনসার হতে ১ প্লাটুন আনসার সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এছাড়াও তৎক্ষনাৎ পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনা দেন।
সাক্ষাতের সময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, কিশোরগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, মহানগরী ইউনিটের সভাপতি মো. লোকমান খান, আদর্শ ইউনিটের সভাপতি মো. শাহ আলম, এনেক্সকো ইন্টা. এর চেয়ারম্যান শেখ মো. শাকিল, ঢাকা রেডিমেইড গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক কাজী শরীফুল ইসলাম, বঙ্গবাজার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বুধবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় 'গোড়ান খেলার মাঠ' এর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “"কোনো দুর্যোগ হলে প্রথম কাজ হলো উদ্ধার তৎপরতা। সেটি গতকাল(মঙ্গলবার) সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমরা মানবিক দিকগুলো বিবেচনা করে পরিপূর্ণভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে এবং পাশে থাকব।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র আরও বলেন, “ আমার সাথে প্রধানমন্ত্রীর আজ(বুধবার) সকালে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, আমরা তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার পরেই সকল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্তভাবে তিনি অনুদান দিবেন। যাতে করে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তারা যেন আবার এই ব্যবসায় নামতে পারে। তাদের পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। সেই দিকটাই এখন আমাদের সকলের অগ্রাধিকার।"
বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও মামলার কারণে তা করা যায়নি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, "আমাদের সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। মামলার কারণে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। কিছুদিন সময় দিতে হবে। মানবিক দিক নির্ণয় করে তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে -- তাদেরকে অনুদান দিয়ে আমরা সেটা নিশ্চিত করব। তারপর তারা যাতে সেখানে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সেজন্য আমরা নতুন একটি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের সাথে বসব। সেটা নিশ্চিত করার পরেই আমরা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করব।"
বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড কোনও ধরনের পরিকল্পিত নাশকতা কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, "এখন পর্যন্ত এটি একটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তারপরেও, এটি কোথা থেকে শুরু হয়েছে এবং কিভাবে শুরু হয়েছে তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।"
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পূর্বেকার পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবাজারে নতুন করে পাইকারী মার্কেটই নির্মাণ করা হবে উল্লেখ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, "আমরা তাদেরকে নিয়ে বসব। তারা কিভাবে চায় (তা জানব)। প্রধানমন্ত্রীকেও আমরা ভবনের নকশাটি দেখাব। এটা পাইকারী বাজার। আমরা এটাকে পাইকারী মার্কেট হিসেবেই তৈরি করব এবং যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা নতুন ভবনে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদেরকেই আগে পুনর্বাসিত করা হবে।"
এ সময় ঢাকা-৯ আসেনর সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।