নভেম্বর ১৪, ২০২১, ০৮:২৯ পিএম
দেশে কয়েক দিন ধরে চলা বৃষ্টির পানি জমে ডেঙ্গুর রোগবাহী এডিস মশা বিস্তারের সুযোগ রয়েছে। রবিবার (১৪ নভেম্বর) বেলা সোয়া ২টায় নিয়মিত ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম এ কথা বলেন।
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা থামলে পানি জমে থাকার সুযোগ আছে। জমে থাকা পানিতেই এডিস মশার বিস্তার হয়। আমরা যদি বাসাবাড়ি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে না চলি, তবে মশার বংশবিস্তার রোধ করা যাবে না।’
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রবিবার গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩১ জন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এনিয়ে চলতি বছর রবিবার পর্যন্ত ২৫ হাজার ৬৩৪ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৯৭ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রবিবার গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া ১৩১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে রাজধানীর ৪৬ টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা য়ায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৬৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৫ হাজার ৬৩৪ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪ হাজার ৯০৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ডেঙ্গু রোগী গণনা শুরু হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। আর ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত হন ৫ হাজার ৫৫১ জন।
প্রতিবছর বর্ষাকালেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। আর আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের বেশি।
তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গু কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ওই বছর এ সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর’র দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে সারাদেশে প্রাণ যায় ৯৩ জনের। ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮, ২০০৩ সালে ১০ জন মারা যান। তবে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, চার বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে ছয়জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে আটজন এবং ২০১৮ সালে ২৬ জন ডেঙ্গুতে মারা যান।
এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছরের জুলাই মাসে ১২ জনের মৃত্যু হলেও পরের এক মাসেই (আগস্ট) ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ৯৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।