সম্প্রীতির সমাজ গঠনে ধর্মীয় বহুত্ববাদ চর্চার আহ্বান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৭, ২০২১, ০৯:২২ পিএম

সম্প্রীতির সমাজ গঠনে ধর্মীয় বহুত্ববাদ চর্চার আহ্বান

ধর্মীয় বহুত্ববাদ চর্চার মাধ্যমে সমাজকে সহনশীল ও সমাজের মানুষের মধ্যে প্রকৃত সম্প্রীতি স্থাপন করা সম্ভব। অথচ বর্তমান সময়ের একটা বড় অংশের সহিংস উগ্রবাদের বিস্তার ঘটছে ধর্মের নামে। শনিবার সকালে ঢাকাস্থ সিরডাপ মিলনায়তনে ইউএনডিপি এর  সহযোগিতায় আলোর পথে নবযাত্রায় (আপন) ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘সহনশীল সমাজ গঠন ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আন্ত:ধর্মীয় সংলাপে’ এ বক্তব্য তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন এম. জাকির হোসেন খান।

সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধের ওপর আলোচনা হয়

আন্ত:ধর্মীয় সংলাপে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় চারটি প্রধান ধর্মের প্রেক্ষিতে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধের ওপর মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো, অধ্যাপক রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম. শমশের আলী, নাদিম ফরহাদ, পিভিই কোঅর্ডিনেশন অফিসার ইউএনআরসি এবং শীলা তাসনিম হক, সিনিয়ির গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আপন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং ইউএনডিপি বাংলাদেম এর  সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সংলাপে বিভিন্ন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের সদস্যসহ  ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা, এবং সরকারি মাদারিপুর কলেজ)  স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।

যারা বক্তব্য রাখেন

সংলাপের শুরুতে  আপন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এম. আফতাবুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত ‘মোবালাইজ ইয়ুথ ফর ইনক্লুসিবিলিটি এন্ড টলারেন্স’ প্রজেক্টের কার্যক্রম তুলে ধরেন। সংস্থার নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন এম. জাকির হোসেন খান ‘শান্তি ও  সম্প্রীতি স্থাপনে ধর্মীয় বহুত্ববাদ’ বিষয়ক উপস্থাপনায় বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহুত্ববাদের প্রচার ও চর্চা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়। বহুত্ববাদে বিভিন্ন মত, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আদর্শের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকেই বোঝায়।” আন্ত:ধর্মীয়ভাবে দেখলে কোনো ধর্মই জোর করে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাসকে অপরের ওপর চাপিয়ে দিতে বলে না। ধর্মীয়ভাবে ও ধর্মতত্ত্ব অনুসারে কোনো ধর্মই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

ধর্মের মাধ্যমে শান্তির আহ্বান 

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন,  বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মের সহঅবস্থানই আনতে পারে শান্তি”। 

ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো এর  মতে, ধর্ম সবসময় শান্তি চায়। আর মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ধর্মের প্রচার করে। আর তাই ধর্মের একজন বাস্তব অনুসারী কখনও উগ্র হতে পারে না। সবার আগে আমাদের যুবকদের ভাল মানুষ হতে হবে। এদিকে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রেক্ষিতে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে অধ্যাপক রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী বলেন- ধর্মের সঠিক জ্ঞান ও প্রতিপালনই পারে যুবসমাজকে সহিংস উগ্রবাদ থেকে রক্ষা করতে এবং সকলের সম্প্রীতির  সেতুবন্ধন তৈরি করতে। প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম. শমশের আলীর মতে, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ধর্মের একজন অনুসারী সে যুবক হউক বা নারী-পুরুষ হউক,  সে সহিংস বা উগ্র হতে পারে না এমনকি সা¤্রদায়িক বা অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে না। আমাদের সকল শ্রেনীর, ধর্মের মানুষের মধ্যে অবহেলা ও অবজ্ঞা না করে সকলকে নিয়ে ভালবাসার আলিঙ্গন দিয়ে বরণ করে নিতে হবে, তাহলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। 

তরুনদের সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে

দেশব্যাপী ইউএনডিপি এর ডাইভারসিটি ফর পিস প্রকল্পের কার্যক্রম উল্লেখ করে শীলা তাসনিম হক, সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ বলেন, আমাদের যুবকরা নানা সামাজিক কারণে ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাই তাদেরকে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তরুণদের  মেধা ও যুক্তি দিয়ে ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং পরিবার থেকেই সহনশীলতার চর্চা করতে হবে। তাহলেই তারা ভিন্নতা গ্রহণের মানসিকতা পোষণের মাধ্যমে উগ্রবাদ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে। আন্ত:ধর্মীয় সংলাপের জ্ঞান শুধুমাত্র শোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যক্তিজীবনে এটার প্রতিফলন ঘটানো উচিত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেতেই সহনশীলতার পরিচয় দেখাতে হবে। বর্তমানে সারাবিশ্বই সহনশীলতার চর্চা কমে যাচ্ছে ।

Link copied!