উৎসবের আমেজে আশা ফিরছে অর্থনীতিতে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৩, ২০২২, ০৭:১৫ পিএম

উৎসবের আমেজে আশা ফিরছে অর্থনীতিতে

উৎসবের আনন্দও বিবর্ণ ছিল করোনার ছোবলে। তবে করোনার প্রকোপ কমে যেতে থাকায় আবারও উৎসব অনুষ্ঠান বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এরই সাথে চাঙ্গা হচ্ছে উৎসব নির্ভর অর্থনীতি। দুবছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারলেও স্বাভাবিক লেনদেন হওয়াতেই খুশি ব্যবসায়ীরা।

বৈশাখে লেনদেন হত ৫০ হাজার কোটি টাকা

করোনা ভাইরাসের আগে প্রতি বছরই বৈশাখ কেন্দ্রিক অর্থনীতি অবস্থা উন্নতি হচ্ছিল। তবে করোনা আঘাতের পর দুইবছর দোকান পুরোপুরি না খুলতে পারায় লেনদেনে ভাটা পরে। করোনার আঘাতের আগে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হত।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের আগে বৈশাখের বাজারে দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, খেলনা, প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বাজারেই বিক্রি হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এছাড়া ইলিশের বিকিকিনি হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। একইভাবে মিষ্টির দোকানগুলোয় বৈশাখে বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার মিষ্টি। সব মিলে বৈশাখে কেবল পোশাক বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার।

চলতি বছরে লেনদেন স্বাভাবিকের আশা

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দুই বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়ছিল। তবে চলতি বছরে করোনা পূর্ববর্তী বছরের মত লেনদেন আশা না করলেও ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন আশা করছে ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা আবারও পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে ৩১ মার্চ থেকে জাটকা ধরা নিষেধ থাকায় ইলিশের সরবারহ কম হবে বলে জানায় অনেকে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যপণ্যের বিক্রির পাশাপাশি পোশাক খাতেও এর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বর্ষবরণ উৎসব বন্ধ থাকায় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে চলতি বছরে হয়ত এই বিষয়টা অনেকটাই সামাল দিয়ে ওঠা যাবে। বর্ত মানে এখন ব্যবসা নয়, জীবন বাঁচানোর চিন্তা করতে হবে।

চাঙ্গা হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসা

বৈশাখী উৎসব ঘিরে আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম, ক্রেডিট কার্ড ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় অর্থের পর্যাপ্ত জোগান রাখে। মোবাইল ব্যাংকিং ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও লেনদেন বাড়ে। গত দুই বছর ধরে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। এ বছর সেটি আরো বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পহেলা বৈশাখের পর ঈদ বাণিজ্যেও বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মুসলিম ঢালী বলেন, করোনার সময় ব্যবসা ঝিমিয়ে পড়েছিল। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েন। এ বছর পরিস্থিতি ভালো। গত শীত মৌসুমেও বেচাকেনা ভালো হয়েছে। ঈদের ব্যবসাও ভালো হবে। জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে আসছেন। আশা করি, এবারের ঈদে করোনার ধকল কাটিয়ে উঠবেন ব্যবসায়ীরা।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বৈশাখের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বৈশাখকে ঘিরে যে ধরনের পণ্যের কেনাবেচা হয় তা মূলত দেশীয় পণ্য। আর এ কারণেই বৈশাখের উৎসব যত বড় হচ্ছে, তত বেশি তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বৈশাখে দেশীয় কুটির শিল্পের একটি বড় বাজার তৈরি হয়। সেই সাথে নানান ধরনের দেশীয় পোশাক, দেশীয় খাবার, হস্তশিল্পজাত গয়নাগাটি, ফুল, ইত্যাদি বড় পরিসরে কেনাবেচার সময় হল বৈশাখী উৎসব।

নববর্ষ ও ঈদ ঘিরে যেমন বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা ও জোগান বাড়ে, তেমনি বাজারে বাড়ে টাকার সরবরাহ। বিভিন্ন খাতের কর্মীরা বেতনের সঙ্গে পান উৎসব ভাতা। এ সময় শ্রমের মজুরিও বেড়ে যায়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অন্য মাসের চেয়ে বাড়তি খরচ করেন। ফলে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন গতি। মাঝে করোনার কারণে দুই বছর সেই জোয়ারে ভাটা পড়ে। এবার ঘুরে দাঁড়াবে উৎসবের অর্থনীতি- এমন প্রত্যাশা সবার।

Link copied!