ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
ছাত্র-জনতার আন্দোলেনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এসব ব্যাংক হিসাবে ২২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৯০ টাকা রয়েছে। এই টাকা তোলা যাবে না, তবে হিসাবগুলোতে টাকা জমা করা যাবে। খবর বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
শুনানিকারী দুদকের আইনজীবী মীর মোশাররফ আলী সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করেন।
এদিন ইসলামী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলমের ছেলে ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদনে দুদক বলেছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখায় ১২৫টি হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। হিসাবগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।
এস আলম নামে বেশি পরিচিত সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘অবৈধভাবে’ অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য ওই ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা রাখার কথা তুলে ধরা হয় আবেদনে।
এতে বলা হয়, যেকোন সময় এই অর্থ ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে বিদেশে ‘পাচার করার সম্ভাবনা’ রয়েছে। সে কারণে হিসাবগুলো জমা রাখা টাকা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
এর গত ৭ অক্টোবর এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের মধ্যে ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ।
শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরীয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের আরো কয়েকটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার সরকারের মালিকানায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
এর মধ্যে গত ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একদিন বাদে ৩১ অগাস্ট সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য মিলছে।