সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের-টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, গরুর মাংস, মুরগি ও ডিম—এই ১৫টি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
রোজার সময়ে পণ্যের দাম কয়েক দফায় বাড়ার পর ঈদের পর প্রথম সপ্তাহেই বাজারে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, আটা, ময়দা, ডিম ও গুঁড়া দুধের দাম নিত্যপণ্যের দাম নতুন করে বেড়েছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি করা প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম সামনে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। অথচ সপ্তাহের শুরুতেও পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা। গত দুই দিনে দাম বেড়েছে ডালেরও। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মোটা দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর সরু দানার মসুর ডালের কেজি এখন ১৩০ টাকা। ঈদের আগে দাম ছিল ১২০ টাকা।
ঈদের পরও ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া খোলা চিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ২ টাকা বেশি দামে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর কেজিতে ২ টাকা বেড়ে খোলা আটার দাম এখন মানভেদে ৪০-৪২ টাকা। খোলা ময়দায় দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে মোড়কজাত গুঁড়া দুধ। কোম্পানিভেদে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির গুঁড়া দুধের কেজি এখন ৬৯০ থেকে ৭৫০ টাকা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারে কথা হয় গৃহিণী নিলুফা ইয়াসমিনের সঙ্গে। বাজারের মাহিন জেনারেল স্টোর নামের একটি মুদিদোকান থেকে তিনি ৩৯৫ টাকায় তীর কোম্পানির ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল, ২২০ টাকায় মোটা দানার ২ কেজি মসুর ডাল, ৮০ টাকায় ২ কেজি আটা, ১২০ টাকায় ৩ কেজি দেশি পেঁয়াজ এবং ১১৫ টাকায় এক ডজন ডিম কেনেন। এতে তাঁর খরচ হয় মোট ৯৩০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগের বাজারমূল্য অনুযায়ী, নিলুফার কেনা পণ্যগুলোর দাম প্রায় ১৩৯ টাকা কম ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মাসের সংসারের খরচের হিসাব মেলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘দেশি মসুর ডাল (সরু দানা) কেনা অনেক আগেই ছেড়েছি। বাচ্চাদের জন্য দেশি মুরগির ডিম কিনতাম, সেটাও বাদ। মোড়কজাত আটা বাদ দিয়ে নিচ্ছি খোলা আটা। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্বস্তি নেই।’
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি মসুর ডালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। যেহেতু বিদেশ থেকে আমদানি করা ডালের দাম বেড়েছে, তাই সুযোগ বুঝে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই দেশি মসুর ডালের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের খুচরা ও পাইকারি উভয় বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
পেঁয়াজের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-উর-রসিদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দেওয়া অনুমতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ায়। এরপর নতুন করে আর পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমদানির অনুমতি দিলে বাজার আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
একটি গুঁড়া দুধ সরবরাহকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) বলেন, কোম্পানি থেকে তাঁদের শুধু বলা হয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পর্যায়ে ক্রয়মূল্য বেশি পড়ছে। এ কারণেই দাম বেড়েছে।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর এক ডজন কিনলে দাম রাখা হচ্ছে ১১৫ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেও প্রতি হালি ৩৬ টাকা ও প্রতি ডজন ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. টিপু আলী বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি, ডিমের দাম কয় টাকা বাড়লে আর ক্ষতি কী!’
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে গত ১০ এপ্রিল প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ছিল ৩২-৩৫ টাকা। আর গত বছরের এপ্রিল মাসে ডিমের দাম ছিল ২৮-৩০ টাকা। এক বছরে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজারের ওপর সঠিক নজরদারি দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক।