জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ১২:৫০ এএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “অর্থনীতিকে টেকসই করতে অবশ্যই ব্যাংক খাতের সংস্কার দরকার। আর অপচয় বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের মতো দেখছি, দেখবো- এ জাতীয় বক্তব্য ব্যাংকারদের হতে পারে না। বরং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতে হবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেব।”
শনিবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ব্যাংকিং অ্যালমানাক’র চতুর্থ প্রকাশনীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে এ কথা বলেন তিনি।
সাবেক গভর্নর বলেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে একটি ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পত্রিকায় ব্যাংকারদের বক্তব্য যেভাবে আসছে, তাতে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। আমাদের আরেকটু দ্রুত, দৃশ্যমান ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থনীতি নিয়ে যত কাজ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে। ভিয়েতনামের মতো দেশ যা বলে তার ৯০ শতাংশের বেশি করে। আর আমরা টার্গেট নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু তার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই।”
ব্যাংকিং নীতিমালা ও সুশাসনের তথ্য প্রকাশ করলে ‘বিপদ কেটে যাবে’ মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তথ্য অবশ্যই থাকতে হবে। তথ্যের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা জনবান্ধব হয়। শুধু পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। কারণ হচ্ছে, পরিসংখ্যান যেভাবে আসে, তা সবসময় গুণগত মানের হয় না।”
মুদ্রানীতি স্থিতিশীল রাখার উপায় নিয়ে তিনি বলেন, “প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে টাকার সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু সংকোচনশীল মুদ্রানীতি নিলে ছোটদের ঋণ পেতে সমস্যা হয়, বড় গ্রহীতাদের কোনো সময় সমস্যা দেখা দেয় না।”
মুদ্রানীতির সামনে চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে সালেহউদ্দিন বলেন, “বর্তমান বিশ্বেরও চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এটি কমিয়ে আনতেও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু নিয়মতান্ত্রিক কাজ করলে তা হবে না। বিশেষ ক্ষমতা সবারই রয়েছে, তা গভর্নরেরও রয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আরও আনতে হবে।”
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়াতে জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সুশাসনের তিনটি পিলার (স্তম্ভ) রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পরিসংখ্যানগত তথ্য, নীতি ও তা জনবান্ধব হওয়া। আমাদের নীতিগুলো জনবান্ধব হচ্ছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন। সেটি যদি না হয় তাহলে সুশাসন ফিরবে না।”
অর্থনীতির সঠিক চিত্র উঠে আসছে না মন্তব্য করে এই গবেষক বলেন, “সব আলোচনার আগে ‘প্রকৃত’ শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন। ব্যাংকিংয়ের কথা বলি, প্রবৃদ্ধির কথা বলি, দারিদ্র্যের কথা বলি- প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এখন ‘প্রকৃত’ শব্দটা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
ফুটপাতে ছিন্নমুল মানুষের চিত্র তুলে ধরে জিল্লুর রহমান বলেন, “এই চিত্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে, প্রকৃত অবস্থা কী? এখানে অর্থনৈতিক অনেক বিষয় চলে আসে। এসবের প্রকৃত অবস্থা কী, জানা প্রয়োজন। বাজারে অনেক তথ্যই পাওয়া যায় কিন্তু তথ্যের দ্বিধা ও বিঘ্ন দূর করতে প্রকৃত তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং অ্যালমানাক সেই কাজটিই করছে।”
ব্যাংকিং অ্যালমানাক প্রকাশনীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ব্যাংকিং অ্যালমানাক’র সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমানুল্লাহ, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, ব্যাংকিং আ্যালমানাকের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং ব্যাংকিং অ্যালমানাকের প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান প্রমুখ।