কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া নির্যাতিত শিক্ষার্থী যেন ভয়ভীতিহীনভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে পারে এ বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার (০১ মার্চ) এ আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বে দ্বৈত বেঞ্চ।
সম্প্রতি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অপব্যবহার করছেন, যা তাদের রাজনৈতিক দলের ইমেজও নষ্ট করছে বলে হাইকোর্ট তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন।
এর আগে গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বে দ্বৈত বেঞ্চে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে শোনান আইনজীবীরা। প্রতিবেদন দুটিতে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতনের কথা উঠে এসেছে। ছয় শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।
এরপর দুটি প্রতিবেদন আরও পর্যালোচনা করে আজ (১ মার্চ) এ বিষয়ে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করেন উচ্চ আদালত। এ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি সম্পর্কেও জানতে চান আদালত।
বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নির্যাতন করেছেন। অমানবিক, পাশবিক, নির্মম নির্যাতন করেছেন তিনি।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে পাশবিক নির্যাতনের সত্যতা। নির্যাতন করেছেন মিম, তাবাসসুম, উর্মি, লিমা, মুয়াবিয়া আর নেতৃত্বে ছিলেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা।
এ ছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় হলের প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটরদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে। অভিযুক্তরা ভিকটিমকে মুচলেকা দিতেও বাধ্য করেন।
বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসেছে, প্রক্টর চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং অভিযোগ পেয়েও কোনো পদক্ষেপ নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত নিজস্ব কী আইন ও বিধি আছে, সেটিও জানতে চেয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করা হয়, যা সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়। ইবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান মিল্টন তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন।
এর আগে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইবির রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। ওইদিন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল ৫০০৯ নম্বর স্মারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ইবিশিক্ষার্থী ফুলপরীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মোহসীন জনস্বার্থে রিটটি করেন। স্বরাষ্ট্রসচিব, শিক্ষাসচিব, ইবির ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ইবি ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে– তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে ও তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।