জুলাই ২৮, ২০২৩, ১২:০৮ পিএম
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবছর মোট ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৮৬ হাজার কম। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।
এ বছর এসএসসি ও সমমানে গড় পাস করেছেন ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই পাসের হার ছিলো ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ফলে এবার এসএসসি ও সমমানে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, গত বছর বা এর আগের বছরে যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তারা তো আর পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা দেয়নি। তারা অল্প নম্বরে, অল্প বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে। কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবে সেই সময়ে পরীক্ষার পাসের হারটা অনেক বেশি ছিল।”
শিক্ষামন্ত্রী এসময় আরও বলেন, আপনি যদি তিন বা চারটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন; আপনি এখন ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, পুরো ১০০ নম্বরে পরীক্ষা দিচ্ছেন। সেখানে আগেরবার তারা খুব কম নম্বরে পরীক্ষা দিয়েছে, কম বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে যেন যথাযথভাবে শিক্ষাকার্যক্রম করতে পারে, আমাদের সেসব যথানিয়মে করব। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক দলগুলো, তারা তাদের যেকোনো কর্মসূচিই দেন না কেন, সেই কর্মসূচির কারণে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে। অতিমারি আমাদের হাতে ছিল না, আন্দোলন আমাদের হাতে; অতিমারি সারাবিশ্বকে পর্যুদস্ত করেছে, সারাবিশ্বেই টালমাটাল পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সেটিকেও সালাম দিয়ে এই জায়গা পৌঁছেছি।”
দীপু মনি আরও বলেন, “রাজনীতি-আন্দোলন আমাদের নিজস্ব বিষয়, এর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। আমরা বিশ্বাস করি রাজনীতি মানুষের জন্য, দেশের জন্য। আর আমাদের ভবিষ্যৎ হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা, তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে জিম্মি করে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন পালন না করেন। কারণ, জনগণের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।”
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবং অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়।
এর আগে, সকাল ৯ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফলের সার-সংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় দেশের সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এরপর বোর্ড থেকে একটি ক্লিকের মাধ্যমে সবার জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়।
বোর্ড অনুযায়ী এবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৯, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৮, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪২, ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪৯, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮৪, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৯ এবং যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
যেভাবে ফল জানা যাবে
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট educationboardresults.gov.bd প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবে। এ ছাড়া এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। সে ক্ষেত্রে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে ইংরেজিতে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর দিতে হবে। এরপর আবারও স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। (উদাহরণ- SSC DHA ROLL YEAR)। ফিরতি মেসেজে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট পেতে বোর্ডের ওয়েবসাইট প্রবেশ করতে হবে। এরপর রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইআইআইএন (EIIN) এন্ট্রি করতে হবে। তাহলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ এপ্রিল শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হয় ২৮ মে। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। সারাদেশে ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী মোট ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়।