রাজপথ ছাড়েননি জবির আন্দোলনকারীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৫, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম

রাজপথ ছাড়েননি জবির আন্দোলনকারীরা

ছবি: সংগৃহীত

আবাসন, বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে কাকরাইলে রাস্তা অবরোধ করে তারা এ ঘোষণা দেন। পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবিতে রাতভর রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। 

সেখানে তাদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে যানজট। রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির বলেন, কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারী আছেন। তারা রাতভর এখানে অবস্থান করেছেন। কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে এখানকার সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে তৈরি হয়েছে যানজট। দাবি পূরণ না হাওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। বুধবার দুপুর ১২টার পর কাকরাইল মসজিদ এলাকায় লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক আহত হন। রাত ২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছিলেন। এর আগে বিকেলে আটটি বাসে কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনও।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সন্ধ্যায় বলেন, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে সরে যাননি। এর আগে তিনি জানান, যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে পুলিশের ব্যারিকেডের ওপাশে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে রওনা হন। প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। ব্যারিকেড ভেঙে তারা মৎস্য ভবনের দিকে যেতে থাকেন। সেখানে পৌঁছলে দ্বিতীয় দফা বাধা দেয় পুলিশ। এবারও তারা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদ এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যায়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা কিছু সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে তারা আবারও কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন। আহতদের নেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

আহতদের অন্তত ৩৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন– বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন, ঢাকা ট্রিবিউনের জবি প্রতিনিধি সোহান ফরাজি, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন রেদোওয়ান, আসিফ, রহমান, আকিব, আরিফ, রফিক, শফিক, ওমর ফারুক, মেহেদী, অর্থিব, আপেল, মুজাহিদ, রায়হান, ফারুক, আবু বক্কর, নিউটন, হানিফ, জীবন, শহীদ, রাসেল, জিসান, মাহতাব, শহীদ, রাসেল, গৌরব ও আব্দুল মান্নান। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহতাব লিমন ও পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুবর্ণ আস সাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি ৩৬ জন বাসায় ফিরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। হামলাকারী পুলিশের বিচার করতে হবে।

জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এ কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। বিকেলে কর্মসূচির স্থানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ। 

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সহকারী সচিব সাব্বির আহমদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি দল সমস্যা নিরসনে আলোচনা করছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যান। সেখান থেকে আশানুরূপ ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। 

আন্দোলনকারীদের তিন দাবি হলো– আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষে জবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন এ কথা বলেন। রাত ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্যে’র মতামতের ভিত্তিতে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সেই দায় সরকারকে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর রক্তচক্ষু দিয়ে তাকাবেন না। মাহফুজ আলমের সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এই দায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। এর আগে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিতর্কিত করতে কে বা কারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বোতল নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

Link copied!