সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টে রিট করা এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় তিন সদস্যের এবং ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন দুই সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে।
ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছিলেন ওই ছাত্রী। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতকাল সোমবার ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলী হোসেন রিটকারী ওই ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
গতকাল বিকেলে আলী হোসেন ওই ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর এর প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ অনেকে। আজ সংবাদ সম্মেলন করে গণধর্ষণের হুমকিদাতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে এবং হুমকিদাতার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণধর্ষণের হুমকির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদ এবং ‘অপরাজেয় ৭১ অদম্য ২৪’ প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী নাইম হাসানের লিখিত অভিযোগ দেন। এর ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর কার্যালয় ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে আহবায়ক এবং সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূইয়া ও মো. রেজাউল করিম সোহাগকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
একই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের আরেকটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন। এই কমিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মোস্তাক গাউসুল হককে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এ ছাড়াও নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু অগ্রগতি তুলে ধরেন তিনি।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, সাইবার বুলিং মোকাবিলায় তারা একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সাইবার বুলিংয়ের বিষয়টি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে তারা কাজ করছেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যেসব অনলাইন গ্রুপ বা পেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর নাম ও যারা পরিচালনা করেন (এডমিন) তাদেরও নাম বিটিআরসি ও ডিএমপি কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা, ভোটের দিন নিরাপত্তা এবং ভোট গণনার নিরাপত্তার বিষয়েও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদান করতে আসার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো যাতে কোনো প্রকার বাধায় না পড়ে, সে ব্যাপারে আইজিপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হলে নিরাপত্তা উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে বহিরাগতদের বিষয়ে হল প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে ভোটার ভিন্ন কেউ হলে অবস্থান করতে না পারে। অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।